চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত সদরঘাট, অভয়মিত্র ঘাট ও বাংলাবাজার ঘাটের নিলাম কার্যক্রম হাইকোর্টের নির্দেশে ৬ মাসের জন্য স্থগিত থাকলেও নতুন করে অভিয়মিত্র ঘাটের খাস কালেকশনের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ২ মার্চ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (উপ-সচিব) সরোয়ার কামাল স্বাক্ষরিত এক আদেশে অভয়মিত্র ঘাটের খাস আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় এস্টেট শাখার বাজার পরিদর্শক দুর্বাদল চৌধুরীকে। একইসঙ্গে যাত্রী পারাপার ও সহযোগিতার জন্য ফিরিঙ্গিবাজার এলাকার শেখ মোহাম্মদ যুবরাজকে সাময়িকভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, যুবরাজ কোনো সম্পান মাঝি নন। তিনি বিএনপির অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
এই আদেশে ক্ষুব্ধ হয়েছেন চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট সাম্পান চালক সমিতির ২১৪ জন মাঝি, যাদের জীবিকা সরাসরি এই ঘাটগুলোর ওপর নির্ভরশীল। তাদের অভিযোগ, আদালতের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে বহিরাগত ব্যবসায়ীদের হাতে ঘাটের নিয়ন্ত্রণ দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। অথচ এই ঘাটের ওপর নির্ভর করে প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন।
এদিকে হাইকোর্ট গত ৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ঘাট নিলাম কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়। আদালতের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সাঈদ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই স্থগিতাদেশ জারি করেন। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের নতুন খাস কালেকশনের আদেশ এই নির্দেশনার স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করছেন সাম্পান মাঝিরা। বাস্তবে কোন ইজারা ছাড়াই শুধুমাত্র খাস কালেকশনে হাত বদল করা হয়েছে।
চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট সাম্পান চালক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা আদালতের আদেশ সংযুক্ত করে লিখিতভাবে সিটি মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও রাজস্ব কর্মকর্তাদের বহু আগেই জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারপরও বহিরাগতদের দিয়ে ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। যদি পেশাদার মাঝিদের বাদ দিয়ে অন্য কাউকে ইজারা দেওয়া হয়, তাহলে আমরা তা মানবো না। কঠোর আন্দোলনে যেতে পারে মাঝিরা।’
কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এসএম পেয়ার আলী বলেন, ‘২০০৩ সালের পাটনিজীবী নীতিমালা তোয়াক্কা না করে আমাদের উচ্ছেদ করতে চক্রান্ত চলছে। কিন্তু আমরা আমাদের অধিকার রক্ষায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
সিটি মেয়রের সঙ্গে সাক্ষাতের পর মাঝিরা জানান, মেয়র তাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, ঘাটের নিয়ন্ত্রণ মাঝিদের হাতেই থাকবে এবং বিষয়টি পুনরায় পর্যালোচনা করা হবে। তবে মাঝিদের অভিযোগ, কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা বেশি অর্থের বিনিময়ে ঘাটের ইজারা নিতে চাইছে, যা মাঝিদের অধিকার লঙ্ঘন করবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আজ সাম্পান মাঝিরা এসেছিলেন। মেয়রের সাথে দেখা করেছিলেন। কাল আবারও আসবেন হয়তো। মেয়র স্যার যা নির্দেশ দেবেন সেটাই সিদ্ধান্ত হবে।’
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এসএম সরোয়ার কামাল বলেন, ‘আদালতের আদেশ অনুযায়ী আপাতত তিনটি ঘাটের নিলাম কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে খাস কালেকশনের বিষয়ে মেয়রের নির্দেশে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাঝিদের বিষয়টি বিবেচনায় আছে, তারা চাইলে মেয়রের সঙ্গে আবারও দেখা করতে পারেন।’
চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট সাম্পান চালক কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাফর আহমদ বলেন, ‘যদি মাঝিদের স্বার্থ উপেক্ষা করে বহিরাগতদের হাতে ঘাট তুলে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা আন্দোলনে যাব। প্রয়োজনে নদীতে নৌকা ও সাম্পান রেখে বিক্ষোভ করবো।’
এ বিষয়ে জানতে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপ এ বিষয়ে ম্যাসেজ দিয়েও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
জেজে/ডিজে