চট্টগ্রামের পটিয়ায় গাছ থেকে আম পাড়াকে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত এরশাদ আলমের বড় ভাই মো. ইউসুফ। এ ঘটনায় আবদুল আলিম (৩০) নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
রোববার (১৬ মে) দিবাগত রাত ২টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়নের বাণীগ্রাম এলাকার এক নিকট আত্নীয়ের বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়।
এদিকে, খুনের ঘটনায় উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গোরনখাইন এলাকায় থমথম পরিস্তিতি বিরাজ করছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নিহতের বড়ভাই ইউসুফ বলেন, গত বৃহস্পতিবার (১৩ মে) আমাদের গাছ থেকে জোরপূর্বক আম পাড়াকে কেন্দ্র করে আমার ভাই নাছিরের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। আমি গিয়ে ঘাতক আবদুর রহিমকে অনুরোধ করি, ঘটনা যা হওয়ার হয়েছে আমার ভাইদের সঙ্গে যেন কোনো রকমের সংঘাতে না জড়ায়। তখন খুনি আবদুর রহিম আমাকে জবাব দেন, আমাদের সরকার ক্ষমতায়। আমরা কি হাতে মেহেদী দিয়ে বসে থাকবো। আমাদের কথায় গোরনখাইন কাঁপে। এ হুমকির পর থেকেই তারা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করতে থাকেন।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে আরও জানা যায়, রোববার (১৬ মে) রাত সাড়ে আটটার দিকে নিহত এরশাদ আলম ও তার বড়ভাই নাছিরসহ মোটরসাইকেল করে শহরে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে ফকিরা মসজিদ বাজারের কাছাকাছি আসলেই আগের থেকে রাম দা নিয়ে উৎপেতে থাকা ঘাতক আবদুর রহিম, আবদুন নুর ও আবদুল আলীম তাদের উপর হামলা করে। এ সময় উপর্যপুরি রাম দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এক পর্যায়ে ঘাতকরা চলে গেলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে এরশাদকে মৃত ঘোষণা করেন এবং গুরুতর আহত নাছিরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে, স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফকিরা মসজিদ বাজারে উভয়ের জায়গা রয়েছে। যে যার মতো ভোগদখল করে আসছে। জোরপূর্বক আম পাড়াকে কেন্দ্র করে এ রকম একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডে এলাকাবাসীও হতবাক।
তারা আরও জানান, ঘাতকরা তিন ভাইয়ের মধ্যে আবদুন নূর এলাকার চিহ্নিত ইয়াবা ব্যাবসায়ী। তারা ফকিরা মসজিদ বাজারে একটি মুদির দোকানের আড়ালে ইয়াবা ব্যবসা করে আসছে। তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে এলাকায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছেন।
অপরদিকে নিহত এরশাদ আলম উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গোরনখাইন এলাকার মৃত আবদুস সবুরের ছেলে। তারা ৭ ভাই ৪ বোনের মধ্যে এরশাদ সবার ছোট। নিহত এরশাদ সৌদি আরব হতে দুই বছর আগে দেশে ফিরে আসেন। সে অবিবাহিত।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি তাদের ঘটনাটি শুনেছি রোববার রাতে ঘটনাটি সংঘটিত হওয়ার পর। আমি যদি আগে জানতে পারতাম বা কেউ যদি আমাকে বলতেন তাহলে আমি মিমাংসা করে দিতাম। তবে এ ঘটনাটি যারা ঘটিয়েছে তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন এই জনপ্রতিনিধি।
ঘাতকরা স্থানীয় আওয়ামী লীগের পরিচয় দিয়ে ইয়াবাসহ নানা অপরাধ করছে এমন প্রশ্নের জবাবে ওই এলাকার বাসিন্দা ও পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম এজাজ চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, আমি তো রাজনৈতিকভাবে ওদেরকে চিনি না। আর এটা তো রাজনীতির বিষয় না। আমি আওয়ামী লীগ করি ঠিক আছে, তবে এরকম বখাটে কোন ছেলে পেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়।
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার জানান, ফকিরা মসজিদ এলাকায় আম পারাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এরশাদ ও তার বড় ভাই নাছিরকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করলে পরে হাসপাতালে এরশাদ মারা যান। এ ঘটনায় আবদুল আলীম নামের একজনকে আটক করেছি। অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে।
এসএ