গভীর রাতে চট্টগ্রামে ২ মাসের শিশুর প্রাণ গেল হাতির হানায়, ঘুমন্ত গ্রামে হঠাৎ তাণ্ডব

প্রশাসন ও কেইপিজেডের উদাসীনতায় ক্ষতি বাড়ছে

গভীর রাতে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় আবারও বন্য হাতির আক্রমণে প্রাণ হারাল মাত্র দুই মাস বয়সী শিশু আয়মান জাওয়াদ। এ ঘটনায় তার মা খতিজা বেগম গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। হাতির তাণ্ডবে অন্তত ১০টি বাড়ি ভেঙে গেছে— যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

শিশু আয়মানের পিতা মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, শুক্রবার (২১ মার্চ) দিবাগত গভীর রাতে আনুমানিক ২টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। তিনি কান্নারুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আমাদের কিছুই রইল না, ঘর ভেঙে দিল, ছেলেটাকেও নিয়ে গেল…’

হাতির তাণ্ডবে বিধ্বস্ত বাড়িঘর

গ্রামবাসী সেলিম জানান, ‘প্রতিদিনের মতো গ্রামবাসী গভীর রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ করে কেইপিজেডের কাছাকাছি পাহাড় থেকে একটি বড় হাতি নেমে এসে তাণ্ডব শুরু করে। হাতিটি প্রথমে জমাদার পাড়ার মতিউর রহমান ট্যান্ডলের বাড়ি সহ আশপাশের অন্তত ১০টি বাড়িতে হামলা চালায়। দরজা-জানালা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে ফ্রিজসহ বিভিন্ন আসবাব গুড়িয়ে দেয়। আতঙ্কে গ্রামবাসী ছোটাছুটি করতে থাকেন।’

মোহাম্মদ ইব্রাহিম কোনো রকমে পালিয়ে যেতে পারলেও তার স্ত্রী খতিজা বেগম সন্তান নিয়ে বের হতে গিয়ে হাতির সামনে পড়েন। তাড়াহুড়োতে মাটিতে পড়ে গিয়ে আয়মানের মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। আহত খতিজাসহ শিশুকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।

অন্যদিকে প্রশাসনের উদাসীনতা

এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। গত ১২ বছরে কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলায় বন্য হাতির আক্রমণে ১৪ জনেরও বেশি প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু বন বিভাগ, কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় প্রশাসনের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ আজও নেওয়া হয়নি। এর ফলে হাতির দল এখন বনে না গিয়ে লোকালয়ে নেমে আসে, মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে।

প্রতিশ্রুতি থাকলেও কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ কোথায়?

স্থানীয় সমাজসেবক মোহাম্মদ সেলিম জানান, কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল হাতিগুলোকে পুনর্বাসন করার জন্য জেলা ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন কমিটি গঠন করা হবে। কিন্তু সেই উদ্যোগ এখনো কার্যকর হয়নি। এরই মধ্যে আমরা আরও প্রাণহানি দেখতে পাচ্ছি।

জেজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm