খাগড়াছড়ির গুইমারা রামেসু বাজারের চারিদিকে পোড়া গন্ধ। কোনো কোনো দোকান থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে। রাস্তায় পড়ে রয়েছে জানালার ভাঙা কাঁচ। পুড়ে যাওয়া মোটরসাইকেলের অংশ পড়ে আছে রাস্তায়। এই বাজারের বেশিরভাগ দোকানি পাহাড়ি। কিছু কিছু বাঙালি মালিকানার দোকানপাট থাকলেও ক্ষোভের আগুন দুই জনগোষ্ঠীরই কপাল পুড়েছে। হামলার ভয়ে অধিবাসীরা ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে ফিরছেন। বলতে গেলে, গত ২৪ ঘণ্টা তাদের আতঙ্কে কেটেছে।
এর মধ্যে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) জুম্ম ছাত্র-জনতার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়, দুপুর ১২টা থেকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি ও ঢাকা-খাগড়াছড়ি সড়কে অবরোধ শিথিল করা হয়েছে।
এর আগে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার জের ধরে রোববার বিক্ষোভ ও সহিংসতায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল গুইমারার রামেসু বাজার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় গুলিতে তিন পাহাড়ির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর মেজরসহ আহত হন ২০ জন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন—উপজেলার সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের দেবলছড়ি চেয়ারম্যান পাড়ার আথুই মারমা (২১), হাফছড়ি ইউনিয়নের সাং চেং গুলিপাড়ার আথ্রাউ মারমা (২২) ও রামসু বাজার বটতলার তৈইচিং মারমা (২০)।
সোমবার সকাল থেকে অবরোধ সমর্থনকারীরা গুইমারা বাজারে অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক পাহারায় অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি।
খাগড়াছড়ির গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক চৌধুরী জানান, সকাল থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল রয়েছে। পরিস্থিতি সারাদিনই নিয়ন্ত্রণে ছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগুনে অন্তত ৪০টি দোকান, ৫০টি বসতবাড়ি ও গুদাম পুড়ে গেছে। পাহাড়িদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাটের সঙ্গে বাঙ্গালিদের ঘরও পুড়েছে। মোটরসাইকেল পুড়েছে প্রায় ১৮টি। মানুষের গরু–ছাগল লুট করেছে দূর্বৃত্তরা।
রামেসু বাজারের পাহাড়ি বাসিন্দারা জানান, ঘরের সব জিনিস পুড়ে গেছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এক কাপড়ে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছেন তারা। সোমবারে ঘরে ফিরলেও নিরাপত্তাহীনতায় বাড়ির প্রবেশমুখে বসে রয়েছেন কেউ কেউ।
খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন ছাবের আহম্মেদ জানান, রোববার থেকে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত আহত ১৪ জনকে সদর হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে ১৩ জন চিকিৎসাধীন, একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের লাশও হাসপাতালে রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জুম্ম ছাত্র-জনতার এক মুখপাত্র বলেন, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা এবং নিহত ব্যক্তিদের সৎকারের সুবিধার্থে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত দুই সড়কে অবরোধ শিথিল থাকবে।
এর আগে মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে স্কুলছাত্রী এক কিশোরী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। ওইদিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে তাকে উদ্ধার করে স্বজনেরা। কিশোরীর বাবা মামলা করার পর এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শয়ন শীল (২১) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে ছয়দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত।
ঘটনার পরদিন বুধবার থেকে জুম্ম ছাত্র-জনতা ধর্ষণের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শনিবার দুপুর ২টার পর সদর, পৌর এলাকা ও গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
আইএমই/ডিজে