প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা হাফেজ আহমদুল্লাহ আর নেই

উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ ও আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার শায়খুল হাদীস, প্রধান মুফতি ও মুহতামিম আল্লামা হাফেজ আহমদুল্লাহ (রহ.) আর নেই (ইন্না লিল্লাহি…রাজিউন)।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।

আল্লামা আহমদুল্লাহ ছিলেন আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের সহ-সভাপতি, ইসলামিক ফিকহ বোর্ড বাংলাদেশের পৃষ্ঠপোষক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সালসাবিলের প্রধান উপদেষ্টা।

১৯৪১ সালের ১২ মে চট্টগ্রামের পটিয়ার নাইখাইন গ্রামে জন্ম নেন তিনি। তিনি ছিলেন আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মুজাহিদে মিল্লাত মাওলানা শাহ আহমদ হাসান (রহ.)-এর নাতি এবং মরহুম মুহাম্মদ ইসার সন্তান।

শৈশবে কুরআন শিক্ষা শুরু করে অল্প বয়সেই হিফজ শেষ করেন। পরে জিরি মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন এবং উচ্চশিক্ষার জন্য যান পাকিস্তানে। সেখানে জামিয়া আশরাফিয়া লাহোর, খাইরুল মাদারেস মুলতান ও দারুল উলুম করাচীতে অধ্যয়ন করেন। এ সময়ে তিনি মাওলানা ইদ্রিস কান্ধলভি, মাওলানা জামিল আহমদ থানভী ও মুফতি শফী উসমানী (রহ.)-এর মতো খ্যাতিমান আলেমদের ছাত্র হওয়ার সুযোগ পান। তাঁর সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানী।

দেশে ফিরে ১৯৬৮ সালে জিরি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন আল্লামা আহমদুল্লাহ। দীর্ঘ ২৩ বছর অধ্যাপনার পর আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ায় যোগ দেন এবং পরবর্তীতে এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান মুফতি ও শায়খুল হাদীস হন।

শুধু শিক্ষাদানেই নয়, ইসলামী সাহিত্যেও ছিল তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে— যুগোপযোগী দশ মাসায়েল, মাযহাব ও মাযহাবের প্রয়োজনীয়তা, তাসকীনুল খাওয়াতীর, মহিমান্বিত রমজান, মাসায়েলে রমজান ও নাফহাতুল আহমদিয়া ফি খুতুবাতিল মিম্বারিয়া। এছাড়া তিনি তাঁর নানা শাহ আহমদ হাসান (রহ.)-এর অসমাপ্ত গ্রন্থ মাশায়েখে চাটগামী সমাপ্ত করে দুই খণ্ডে প্রকাশ করেন।

তাঁর মৃত্যুতে দেশ-বিদেশের আলেম সমাজে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন ও মাদ্রাসার পক্ষ থেকে শোক জানানো হয়েছে।

রোববার রাত ৯টায় পটিয়া আল জামিয়া আল ইসলামিয়া জমিরিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মাদ্রাসার মাকামে আজিজিয়া কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা আবু তাহের নদভী।

তারেক রহমানের শোক

প্রখ্যাত আলেমে দ্বীনের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফেসবুক পেইজে পোস্ট করা এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, ইসলামী জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আদর্শ মানুষ হওয়ার যে শিক্ষা দিয়েছেন, তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। পৃথিবী থেকে তাঁর চিরবিদায়ে ইসলামী জ্ঞানের এক দিকপালের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হলো এদেশের মুসলিম সমাজ। তিনি মানুষকে সৎপথে চলার জন্য কোরআন-হাদিসের আলোকে শিক্ষাদান করতেন। বিনয়, প্রজ্ঞা ও সৌজন্যবোধ ছিল তাঁর স্বভাবজাত। জ্ঞান ও পান্ডিত্যে একজন খ্যাতিমান আলেম হিসেবে তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়।

দেশের স্বনামধন্য ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি আহমদুল্লাহ এর মৃত্যুতে দেশ একজন নিবেদিতপ্রাণ আলেমে দ্বীনকে হারালো, এ শূন্যস্থান সহজে পূরণ হবার নয়।

আমি মুফতি আহমদুল্লাহ এর রুহের মাগফিরাত করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গ, গুণগ্রাহী, ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সহমর্মিতা ও সমবেদনা জানিয়েছেন।

এছাড়া আরও শোক জানিয়েছেন পটিয়ার জামায়াত ইসলামীর প্রার্থী ডা. ফরিদুল আলম, এলডিপির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি এম এয়াকুব আলী, সাবেক সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল, বিএনপির সাবেক জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ সাদাত আহমেদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সাইফুদ্দীন সালাম মিঠুসহ আরও অনেকেই।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm