চট্টগ্রামে অপরাধজগতের আরেক আতঙ্ক শহীদুল ইসলাম ওরফে সন্ত্রাসী বুইশ্যা। ‘বুইশ্যা বাহিনী’ নামে একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে তার। চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, খুন, ধর্ষণ ও অপহরণ—প্রায় সব ধরনের গুরুতর অপরাধই ছিল তার বাহিনীর নিত্যদিনের কাজ।
নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় গড়ে তুলেছেন টর্চারসেল, চাঁদা দিতে কেই অস্বীকৃতি জানালে কিংবা তার বাহিনীর কাজে বাধা দিলে তাদের সেখানে নিয়ে করা হতো মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। বুইশ্যা ও তার বাহিনীর নামে নগরের বিভিন্ন থানায় রয়েছে ৪২টি মামলা।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) সকালে র্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের স্কোয়াড্রান লিডার মো. মিজানুর রহমান এসব তথ্য জানান। এর আগে ২০ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ এলাকার ফিনলে স্কয়ার মার্কেটের সামনে অস্ত্রসহ তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
জানা গেছে, গ্রেপ্তার শহিদুল ইসলাম বুইশ্যার বাড়ি ভোলা জেলায় হলেও, চট্টগ্রামের ষোলশহর, চান্দগাঁও ও বহদ্দারহাট এলাকাজুড়ে গড়ে তোলেন অপরাধের বিশাল সাম্রাজ্য। বুইশ্যা ও তার বাহিনীর নামে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, চাঁদাবাজি, নাশকতা ও মাদক সংক্রান্ত ৪২টি মামলা রয়েছে। বুইশ্যা ২০২২ সালে গ্রেপ্তার হলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও অপরাধে কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
মূলত মানুষকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন, অস্ত্রের মুখে ছিনতাই ও চাঁদা আদায় বুইশ্যার প্রধান কাজ। চাহিদা মতো টাকা না পেলেই ট্রিগারে আঙুল রাখেন তিনি, গুলি চালাতে একটুও দ্বিধা নেই তার। ভয়ে এলাকার কেউ তার অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন না, মামলা করতে গেলেই আসে প্রাণনাশের হুমকি। নগরের বহদ্দার হাট কাঁচাবাজারে করেন একটি টর্চারসেল , চাঁদা না দিলে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে, চলে নির্যাতন।
গত ৯ অক্টোবর চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকায় যৌথ অভিযানে বুইশ্যা বাহিনীর তিন সদস্যকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হলেও মূলহোতা বুইশ্যা ও আইয়ুব আলীসহ মোট ২৪ জন সহযোগী পালিয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের স্কোয়াড্রান লিডার মো. মিজানুর রহমান বলেন, বুইশ্যা চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও এবং পাঁচলাইশ এলাকায় অস্ত্র ব্যবসা, ইয়াবা ও মাদক কারবারসহ কিশোর গ্যাং দিয়ে অধিপত্য বিস্তার করে চাঁদাবাজি করে আসছে। তার চাঁদাবাজিতে কেউ বাধা দিলে সে তার নিজস্ব গ্রুপের সন্ত্রাস দিয়ে জোর করে অপহরণের পর বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার দিগন্ত খাজা টাওয়ার এলাকায় ‘টর্চারসেলে’ নিয়ে নির্যাতন করে এবং সেখানে তার একটি গোপন নেটওয়ার্ক রয়েছে, যার মাধ্যমে সে আগেই আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে যায়।
আসন্ন নির্বাচনের আগে চট্টগ্রাম নগরের অপরাধ জগতের লাগাম টেনে ধরতে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানায় র্যাব।


