চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি এলাকায় এসএ পরিবহনের একটি কাভার্ড ভ্যান থেকে বিদেশি সিগারেট জব্দের ঘটনায় সিগারেটের পরিমাণ ও বাজারমূল্য নিয়ে ভিন্নমত তৈরি হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভিডিও ফুটেজ, পুলিশের তথ্য ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে প্রদত্ত তথ্য একরকম নয়।
পুলিশ জানায়, অভিযানকালে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ORIS Silver (Nano) ব্র্যান্ডের ১৯ কার্টুন সিগারেট জব্দ করা হয়েছে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ১৯ লাখ টাকা। এ ঘটনায় প্রেরক ও প্রাপক প্রতিষ্ঠানকে পলাতক দেখিয়ে কর্ণফুলী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়।
কিন্তু সরাসরি জব্দকৃত গাড়ি ছিল কোতোয়ালী থানার কাজীর দেউড়ি এসএ পরিবহন অফিস থেকে। সূত্র বলছে, ১৫ ডিসেম্বর ভোর ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে কক্সবাজার থেকে আসা ওই গাড়িতে মোট ৪০ কার্টুন সিগারেট ছিল। ভিডিও ফুটেজে ২১ কার্টুন জব্দের দৃশ্যও ধরা পড়েছে।
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪-এর ধারায় মামলা হয়েছে। মামলার বাদি এসআই কে এম নাজিবুল ইসলাম তানভীর। তবে জব্দকৃত কার্টুনের সঠিক সংখ্যা জানতে অনুরোধ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
পুলিশের এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ ডিসেম্বর ভোরে মইজ্জ্যারটেক মোড়ের পুলিশ চেকপোস্টে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাড়িটি থামানো হয়। তল্লাশিতে ৭টি সাদা প্লাস্টিকের বস্তায় ১৯ কার্টুন সিগারেট উদ্ধার হয়। প্রতিটি কার্টুনে ৫০টি প্যাকেট এবং প্রতিটি প্যাকেটে ১০টি করে ছোট প্যাকেট—মোট ৯ হাজার ৫০০টি ছোট প্যাকেট। প্রতিটি প্যাকেটের মূল্য ২০০ টাকা ধরে বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ১৯ লাখ টাকা।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, উদ্ধারকৃত সিগারেটের গায়ে লেখা ছিল “NANO ORIS SILVER MADE IN U.A.E, UNDER AUTHORITY OF THE TRADEMARK OWNER IN GERMANY”। সেগুলো বাংলাদেশে বৈধভাবে উৎপাদিত নয় এবং শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গাড়িটি এসএ পরিবহনের হলেও প্রতিষ্ঠানকে আসামি করা হয়নি। কুরিয়ার সার্ভিস হিসেবে সরল বিশ্বাসে মালামাল বহন করায় এবং জনদুর্ভোগ এড়াতে গাড়িটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, কাজীর দেউড়ি এসএ পরিবহন শাখার জেনারেল ম্যানেজার মো. মোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, গাড়িটি কর্ণফুলীতে দীর্ঘ সময় আটকে রাখা হয় এবং পরে মামলা দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। তিনি দাবি করেন, এসএ পরিবহন শুধুমাত্র গ্রাহকের বুকিংকৃত পার্সেল পরিবহন করে; প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোনো মালামাল ছিল না। প্রতিটি বুকিংয়ের চালান কপি ও প্রেরক–প্রাপকের তথ্য সংরক্ষিত থাকে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মইজ্জ্যারটেক মোড়, কাজীর দেউড়ি এসএ পরিবহন অফিস এলাকা ও আশপাশের সড়কে পুলিশ উপস্থিতিতে সিগারেটের বস্তা নামানো হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ার পর জব্দকৃত সিগারেটের সংখ্যা ও স্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের নথি, ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষ সূত্রের তথ্যের মধ্যে অমিল থাকায় বিষয়টি আরও যাচাইয়ের দাবি করা হয়েছে।


