চট্টগ্রামে চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরও লোডশেডিং ১০৮ মেগাওয়াট
জ্বালানি সংকটে বন্ধ ১০ কেন্দ্র, বেড়েছে ‘কুলিং লোড’
চাহিদার চেয়েও বেশি উৎপাদন হওয়ার পরও চট্টগ্রামে হঠাৎ বেড়ে গেছে লোডশেডিং। সারাদিনে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা থাকছে না বিদ্যুৎ। এতে অসহনীয় গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। একইসঙ্গে শিল্প কারখানার উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হিসেব অনুযায়ী, চট্টগ্রামে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ১০৮ মেগাওয়াট।
পিডিবি চট্টগ্রাম জোনের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি (গ্যাস, কয়লা ও ফার্নেস অয়েল) সংকট। আর ভাদ্রের তীব্র গরমে কুলিং লোড বেড়ে যাওয়ায় এমনটা হচ্ছে।
পিডিবি চট্টগ্রাম জোনের হিসেব অনুযায়ী, ৯ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) রাত ১১টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট বিদ্যুতের চাহিদা ১ হাজার ৪৭২ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ২ হাজার ৬৬৮ মেগাওয়াট। চট্টগ্রাম থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ যাচ্ছে ৭১০ দশমিক ৮৭ মেগাওয়াট। আর চট্টগ্রামে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ১০৮ মেগাওয়াট।
পিডিবি সূত্রে আরও জানা গেছে, চট্টগ্রামের ১০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। এগুলো হলো—৩০০ মেগাওয়াটের আনোয়ারা ইউনাইটেড বিদ্যুৎ কেন্দ্র, আনলিমা ১১৬ মেগাওয়াট, কক্সবাজার বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এনার্জি প্যাক ১০০ মেগাওয়াট, জুডিয়াক ৫৪ মেগাওয়াট, জুলদা ২১০ মেগাওয়াট, রাউজান -১ ২১০ মেগাওয়াট, রাউজান -২ ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো।
এছাড়াও কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩ নম্বর ইউনিট, কেইপিজেড সোলার, টেকনাফ সোলার নম্বর ইউনিট, ১০০ মেগাওয়াটের এনার্জি প্যাক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও বন্ধ রয়েছে।
এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে নগরীর চকবাজার, বহদ্দারহাট, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, শোলকবহর, বাকলিয়া, কাজির দেউড়ি, লাভলেইন, জুবিলী রোড, টেরিবাজার, হাজারী গলি, আন্দরকিল্লা, দেওয়ান বাজারমুন্সি পুকুর পাড়, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, হামজারবাগ, শুলকবাহর, পাঁচলাইশ, মুরাদপুর, বিবিরহাট, হালিশহর, বন্দরসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ভ্যাপসা গরমে মানুষের জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।
ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বাসা-বাড়িতে ওয়াসার পানি সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এতে পানি সংকটে পড়েছেন অনেকে। বাসা বাড়িতে অসুস্থ বৃদ্ধ ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
নগরীর হালিশহর, কালুরঘাট ও বায়েজিদ শিল্পাঞ্চলে গত কয়েকদিন ধরে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে গার্মেন্টস ও অন্যান্য উৎপাদনমুখী শিল্পে মারাত্মক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দিনে গড়ে ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক কারখানায় উৎপাদন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গেছে।
আগ্রাবাদের দেওয়ানহাট এলাকার বাসিন্দা সাদেক হোসেন বলেন, ‘লোডশেডিংয়ের কারণে বাসার সদস্যরা রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারেনি। বেশি সমস্যা করেছে আমার তিন বছরের ছোট মেয়েটা। মঙ্গলবার রাতে সবমিলিয়ে ৩ থেকে ৪ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে। একবার গেলে ঘন্টাখানেকের আগে আসছে না।’
কাজীর দেউড়ি এলাকার বাসিন্দা আরিফ রায়হান বলেন, ‘আমার এলাকায় বুধবার সারাদিনে প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং হয়েছে। এই গরমে ফ্যান ছাড়া বেশিক্ষণ সময় থাকা যায় না। আর এ বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে আমরা অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি।’
পিডিবি চট্টগ্রাম জোনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকবর হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। একইসঙ্গে জ্বালানি ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এজন্য সাময়িক এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, তবে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।’
তিনি বলেন, ‘ভাদ্রের তীব্র গরমে কুলিং লোড বেড়ে গেছে। যা সামাল দিতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে।’
ডিজে