হাটহাজারীতে সুন্নি-কওমি সংঘর্ষে আহত অন্তত ১৮০, চমেকে ২০ জন, এলাকাজুড়ে ১৪৪ ধারা
গভীর রাতে সেনা হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
ঈদে মিলাদুন্নবীতে এক যুবক চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা লক্ষ্য করে আঙুল উঁচিয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করার জের ধরে হাটহাজারীতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরে গভীর রাতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। জুলুস থেকে ফেরত সুন্নীপন্থিদের বিভিন্ন বাসে কওমী মতাদর্শের লোকজন হামলা করার পর সুন্নীপন্থীরাও সংঘবদ্ধ হয়ে পাল্টা হামলা চালায় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১৮০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে প্রায় দেড়শতাধিক আহতকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং গুরুতর আহত ২০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আনা হয়েছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এদিকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় রোববারের (৭ সেপ্টেম্বর) পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং পরে সংঘর্ষের ওই ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আহত দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এদের একজন আবু তাহের (১৬) ও হাসান মারুফ (১৭)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাটহাজারী বাস স্ট্যান্ড মোড়ে রাতে জুলুস থেকে ফেরার পথে সুন্নীপন্থিদের বেশ কয়েকটি বাস ভাঙচুর করে কওমীপন্থিরা। এর মধ্যে বাসে থাকা অনেকে ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত হন। পরে সুন্নীপন্থিরাও ধাওয়া দেন কওমীপন্থিদের। এ নিয়ে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটে। একপর্যায়ে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়ক অবরোধ করে রাখে দারুল উলুম মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। এর ফলে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
হাটহাজারীতে ১৪৪ ধারা জারি
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে জনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। শনিবার রাত ১০টা থেকে রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টা পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর থাকবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন এ নির্দেশনা জারি করেন।
১৪৪ ধারার আওতায় মীরের হাট থেকে এগারো মাইল সাবস্টেশন পর্যন্ত এবং উপজেলা গেট থেকে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশ ও সংলগ্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ, মিছিল, গণজমায়েত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। একইসঙ্গে বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র বা দেশীয় অস্ত্র বহন এবং পাঁচজনের বেশি মানুষের একত্রিত হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আদেশ কার্যকর রাখতে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
মাদ্রাসার সামনে ‘মধ্যমা’ দেখানো যুবক আটক, হাটহাজারীতে হঠাৎ উত্তেজনা
এর আগে হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে মধ্যমা আঙ্গুল দেখিয়ে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার ঘটনায় আরিয়ান ইব্রাহীম (২০) নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশ। ঘটনার পর ওই যুবক ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা চাইলেও এ ঘটনায় হাটহাজারীতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে জশনে জুলুস থেকে ফেরার পথে ফটিকছড়ি পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শফিকিয়া দরবার শরীফ এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক ইব্রাহীম ওই এলাকার মৃত মো. মুছার ছেলে।
পুলিশ জানায়, দুপুরে চট্টগ্রামের জশনে জুলুসে যাওয়ার পথে হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে দাঁড়িয়ে অশালীন ভঙ্গি করে ছবি তোলে আরিয়ান। পরে সেটি ফেসবুকে পোস্ট করলে মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীর কওমী অঙ্গনে ব্যাপক ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়।
আরিয়ানের ফেসবুক আইডিতে নিজেকে ফটিকছড়ি পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি পরিচয় দেওয়া হলেও সংগঠনটির সভাপতি একরাম উল্লাহ চৌধুরী জানান, তিনি ছাত্রদলের কেউ নন। বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সংগঠনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং প্রশাসনকে আইনগত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পুলিশ তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) কাজী তারেক আজিজ।