মাদকসেবন, অশালীন ভিডিও ধারণ ও বেপরোয়া জীবনযাপনের অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির মুখপাত্র ফাতেমা আক্তার লিজাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের ঘটনায় এবার পাল্টা আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বহিষ্কার আদেশকে ‘চরিত্র হননের চেষ্টা’ উল্লেখ করে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন লিজা।
শনিবার (১৮ মে) অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হকের মাধ্যমে সংগঠনের আহ্বায়ক আরিফ মঈনউদ্দিন ও সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।
আইনি নোটিশে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার লিজা একজন সহজ-সরল ও আইনানুগ মনোভাবাপন্ন ছাত্রনেত্রী। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রশংসিত হওয়া এই নেত্রীর বিরুদ্ধে বহিষ্কার আদেশ উদ্দেশ্যমূলক এবং গঠনতন্ত্রবহির্ভূত। এ ধরনের পদক্ষেপ ব্যক্তি আক্রোশ ও ঈর্ষা থেকে নেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করা হয়।
লিগ্যাল নোটিশে অভিযোগ করা হয়, কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই চট্টগ্রাম মহানগর শাখার আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে সংগঠনের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে তাকে বহিষ্কার করেন। এ ছাড়া বহিষ্কারপত্রে লিজার বিরুদ্ধে মাদকসেবন ও অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ উত্থাপন করা হলেও তার পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি, যা সম্পূর্ণভাবে তার ব্যক্তিগত চরিত্র হননের সামিল এবং সাইবার ট্রাইব্যুনাল আইনে অপরাধ বলে দাবি করা হয়েছে।
এছাড়া বহিষ্কারাদেশের বিষয়টি মিডিয়ায় প্রকাশ করাকে ‘আইনবিরোধী ও উদ্দেশ্যমূলক’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
আইনি নোটিশে সাত দিনের মধ্যে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে সামাজিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার আদেশ প্রচারের দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় ফাতেমা আক্তার লিজা আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
লিজার বিরুদ্ধে মাদক ও ভিডিও কেলেঙ্কারির অভিযোগ
এর আগে ১৭ মে (শুক্রবার) সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তিতে ফাতেমা আক্তার লিজাকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক আরিফ মঈনউদ্দিন ও সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, মাদকসেবন ও অশালীন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে আসা ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, একটি ভিডিওতে ভ্যাপ (Vape) জাতীয় মাদকদ্রব্য সেবন করা হচ্ছে, অন্যটিতে একজন তরুণীকে অশালীন অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। এসব ভিডিও যাচাইয়ে কোনো এআই (AI) প্রযুক্তির ব্যবহার পাওয়া যায়নি, অর্থাৎ ভিডিও ক্লিপগুলো ভুয়া বা ডিপফেইক নয়— এমনটা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে চট্টগ্রাম প্রতিদিন। তবে সংশ্লিষ্ট ভিডিওতে যে তরুণী রয়েছেন, তিনি ফাতেমা আক্তার লিজা কি না, সেটি তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করা যায়নি।
অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা হুঁশিয়ারি
একই দিন রাতে ফাতেমা আক্তার লিজা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মাদকসেবনের অভিযোগ আনা হয়েছে, অথচ যারা অভিযোগ করছেন, তারাই মাদকসেবনকারী। আমি আল্টিমেটাম দিচ্ছি— দুই ঘণ্টার মধ্যে প্রমাণ না দিলে আমি তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ব্যক্তিজীবন নিয়ে যেসব ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
বহিষ্কার আরও দুই নেতা
লিজার পাশাপাশি একই বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের যুগ্ম সদস্য সচিব আবুল বাছির নাঈম ও সংগঠক শাহরিয়ার সিকদারকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। চাঁদাবাজি ও পুলিশের হাতে আটকের অভিযোগে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
সিপি