চট্টগ্রামে রেলের ১০ ইঞ্জিন অকেজো, মিলছে না যন্ত্রাংশ

ইঞ্জিন সংকটে ৩ মালবাহী ট্রেন বন্ধ

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামে চার বছর আগে কেনা ৩০০০ হাজার সিরিজের নতুন লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) অকেজো পড়ে আছে ডিজেলশপে। ফলে রাজস্ব আয়ের অন্যতম খাত মালবাহী দুটি ট্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে অবশিষ্ট দুটিও বন্ধের শঙ্কা করছেন রেল কর্তৃপক্ষ। অথচ ইঞ্জিন ঠিক রাখতে যন্ত্রাংশ ও কেমিক্যাল কিনতে গত অর্থবছরে প্রায় ২১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়, যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রামে রেলের ১০ ইঞ্জিন অকেজো, মিলছে না যন্ত্রাংশ 2

চট্টগ্রাম ও ঢাকায় সচল ৯০টি ইঞ্জিন রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি দিয়ে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালানো হয়। সেহিসেবে ৮৬টি ইঞ্জিন রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রামে। এছাড়া চলাচল অযোগ্য আছে আরও ১৮টি, অকেজো ১০টি।

রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব ইঞ্জিন অকেজো হচ্ছে সিলিন্ডার ক্লোরিয়াম আয়রন নামে একটি কেমিক্যাল দিতে না পারার কারণে। এসব পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। আর আমদানি করলে তা নদীপথ হয়ে আসতে ৬ মাস থেকে দেড় বছর পর্যন্ত সময় লাগে। এভাবে চলতে থাকলে ডিসেম্বরে অবশিষ্ট দুটি মালবাহী ট্রেনও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

চার বছরে অকেজো ১০ ইঞ্জিন

কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে ২৯৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানি থেকে ২০২১ সালের আগস্টে প্রথম ধাপে ১০টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) এবং পরে ধাপে ৮৪১ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে আরও ২০টি ইঞ্জিন কেনা হয়। এসব ইঞ্জিনের লাইফ টাইম ২০ বছর ধরা হলেও চার বছর যেতেই অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এসব ইঞ্জিনের পার্টসের দুষ্প্রাপ্যতা ও মেকানিক্যাল দক্ষতার অভাবের কারণে ঠিক হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম। তবে এর মধ্যে আরও কয়েকটির অবস্থা একই হলেও মেরামত করে জোড়াতালি দিয়ে চলছে কোনোমতে। অনেক ইঞ্জিনের মোটর নষ্ট হয়ে গেছে।

ইঞ্জিনে যেসব কেমিক্যাল দেওয়া হয় তার মধ্যে অন্যতম সিলিন্ডার ক্লোরিয়াম আয়রন আমদানি করা যাচ্ছে না। ফলে অবশিষ্ট ইঞ্জিনগুলোও নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিসিএস) দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রচুর যন্ত্রাংশ কেনার চাহিদা জমা পড়েছে। কিন্তু সেই পরিমাণের অর্থ বরাদ্দ হয়নি। গত অর্থবছরে মাত্র ২১০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এসব ইঞ্জিন তিন বছর ফ্রি সার্ভিসিংয়ের আওতায় ছিল, কিন্তু সেই সময়ও ২০২৪ সালের আগস্টে শেষ হয়েছে।

পাহাড়তলী ডিজেলশপের কর্মব্যবস্থাপক এহতেশাম মোহাম্মদ সামস বলেন, ২০২১ সালে কেনা ১০ ইঞ্জিন অকেজো পড়ে আছে। যন্ত্রপাতি আমদানি না করায় ও না কেনায় এগুলো সারানো যাচ্ছে না।

মালবাহী ৩টি ট্রেন চলাচল বন্ধ

রেলের সিজিপিওয়াইয়ে ৫টি মালবাহী ট্রেন রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি মালবাহী ও দুটি তেলবাহী। এসব ট্রেন রাজস্ব আয়ের বেশ লাভজনক খাত।

তবে বর্তমানে তিনটি ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে ইঞ্জিন সংকটের কারণে। অপর দুটি ট্রেনও কয়েক মাসের মধ্যে বন্ধ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এখানকার ইঞ্জিন দিয়ে সামলানো হচ্ছে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল।

সিজিপিওয়াই বন্দরে মালবাহী ট্রেন চলাচলে এস্কর্ট ডিউটির দায়িত্বে থাকা রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) ভারপ্রাপ্ত সিআই আবু সুফিযান জানান, ৫ থেকে ৭ মাস ধরে দিন পাঁচটির পরিবর্তে দুটি ট্রেনে এস্কর্ট দেওয়া হচ্ছে।

যা বলছেন রেল কর্মকর্তারা

মালামাল ক্রয় প্রক্রিয়ার বিষয়ে রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক বেলাল হোসেন সরকার বলেন, ‘আশাকরি সমস্যা হবে না।’

নদীপথে মালামাল আসতে ছয় মাসেরও অধিক সময় লাগে। এতে বর্তমান সংকট কিভাবে সামাল দেবেন, জানতে চাইলে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) আহমেদ মাহবুব চৌধুরী বলেন, আমরা দ্রুত জরুরি পণ্যগুলো আনার ব্যবস্থা করছি।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm