চট্টগ্রামে শিশুরা পুড়ছে মায়ের অবহেলায়, ইফতারির গরম তেলে ঝলসানো ছোট্ট শরীর

ব্যান্ডেজে মোড়ানো অসহায় শিশুদের কান্নায় ভারী বার্ন ইউনিট

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ৩৬ নম্বর বার্ন ইউনিটে শরীরে ব্যান্ডেজে বাঁধানো অবস্থায় শুয়ে আছে আট মাসের শিশু ওবায়দুল্লাহ। ইফতারের জন্য পেঁয়াজু বানানোর গরম তেলের ওপর পড়ে দগ্ধ হয় সে। কুমিল্লার কোর্টবাড়ির বাসিন্দা ওবায়দুল্লাহর মা মোহনা বলেন, ‘আট দিন আগে ইফতারের জন্য পেঁয়াজু বানিয়ে চুলার ওপর গরম তেলের কড়াই রেখেছিলাম। ওবায়দুল্লাহ নতুন হামাগুড়ি দিতে শিখেছে। কখন গিয়ে চুলার গরম তেলে হাত দিয়েছে, টের পাইনি। পরে তেলের কড়াই পুরোটাই আমার ছেলের গায়ের ওপর এসে পড়ে।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৬ নম্বর বার্ন ইউনিটে শুধু কান্নার রোল। ছোট্ট শরীরে পোড়ার যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাচ্ছে অসহায় শিশুরা। ব্যান্ডেজে মোড়ানো তাদের ক্ষতবিক্ষত শরীর দেখলে যে কারও হৃদয় কেঁদে উঠবে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৬ নম্বর বার্ন ইউনিটে শুধু কান্নার রোল। ছোট্ট শরীরে পোড়ার যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাচ্ছে অসহায় শিশুরা। ব্যান্ডেজে মোড়ানো তাদের ক্ষতবিক্ষত শরীর দেখলে যে কারও হৃদয় কেঁদে উঠবে।

ওবায়দুল্লাহর মতো আরও অনেক শিশু কোনো না কোনোভাবে ইফতারের কাজে ব্যবহৃত গরম তেলে পুড়ে ভর্তি ছিল চট্টগ্রাম মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে। অনেক শিশু গরম তেলে পুড়ে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৬ নম্বর বার্ন ইউনিটে শুধু কান্নার রোল। ছোট্ট শরীরে পোড়ার যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাচ্ছে অসহায় শিশুরা। ব্যান্ডেজে মোড়ানো তাদের ক্ষতবিক্ষত শরীর দেখলে যে কারও হৃদয় কেঁদে উঠবে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৬ নম্বর বার্ন ইউনিটে শুধু কান্নার রোল। ছোট্ট শরীরে পোড়ার যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাচ্ছে অসহায় শিশুরা। ব্যান্ডেজে মোড়ানো তাদের ক্ষতবিক্ষত শরীর দেখলে যে কারও হৃদয় কেঁদে উঠবে।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিল ৫৭ জন দগ্ধ রোগী। এর মধ্যে ১২ জনই ছিল শিশু। ১২ জনের মধ্যে ৭ জনই ইফতারের আগে গরম তেলে দগ্ধ হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৬ নম্বর বার্ন ইউনিটে শুধু কান্নার রোল। ছোট্ট শরীরে পোড়ার যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাচ্ছে অসহায় শিশুরা। ব্যান্ডেজে মোড়ানো তাদের ক্ষতবিক্ষত শরীর দেখলে যে কারও হৃদয় কেঁদে উঠবে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৬ নম্বর বার্ন ইউনিটে শুধু কান্নার রোল। ছোট্ট শরীরে পোড়ার যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাচ্ছে অসহায় শিশুরা। ব্যান্ডেজে মোড়ানো তাদের ক্ষতবিক্ষত শরীর দেখলে যে কারও হৃদয় কেঁদে উঠবে।

পটিয়া জিরি ইউনিয়নের ইসমাইলের ছেলে ১১ মাসের তোফা মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) গরম তেলে দগ্ধ হয়ে ওয়ার্ডে ভর্তি আছে। তোফার মা রেহানা আক্তার জানান, আমি ইফতার বানিয়ে গরম তেলের কড়াই চুলার ওপর রেখে উঠান ঝাড় দিচ্ছিলাম। ছেলেটা উঠোনে খেলছিল। কখন চুলার কাছে গিয়ে গরম তেলে হাত দিয়েছে, বুঝতে পরিনি। কি বিভৎস একটা দৃশ্য। এখনো গা শিউরে উঠে। কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। বাচ্চাকে সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে এসে ভর্তি করাই।

ছেলে কষ্ট চোখে দেখতে পারছি না, বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রেহানা।

বুধবার চট্টগ্রাম মেডিকেলের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে সরেজমিন দেখা গেছে, ওয়ার্ডের শিশু কর্নার ছাড়াও অন্যান্য রুমেও ব্যান্ডেজে মোড়ানো দগ্ধ শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ভর্তি আছেন ৪৭ জন পোড়া রোগী। এর মধ্যে পুরুষ ২৪ জন, মহিলা ১২ জন। শিশু আছে ১১ জন। এই ১১ জনের মধ্যে ৮ জন ইফতার তৈরির গরম তেলে ঝলসে যাওয়া রোগী। দগ্ধ শরীরে ব্যথা ও যন্ত্রণায় কান্নারত শিশুদের সামলাতে অভিভাবকরা হিমসিম খাচ্ছেন। মেডিকেল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আগুনে দগ্ধ হয়ে ৩৬ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিল ৪০ জন শিশু, মহিলা ২৪ জন ও পুরুষ ৫৩ জন। জানুয়ারিতে ছিল পুরুষ ২৭ জন, মহিলা ৪০ জন ও শিশু ৫৪ জন। চিকিৎসক ও নার্সরা বলছেন, শিশু আগুনে দগ্ধ হওয়ার পর কোনো কোনো অভিভাবক বাচ্চাকে নিয়ে ৩ থেকে ৪ দিন পর আসেন। আসার পর তখন আর রিকভারি হতে চায় না। ড্রেসিং ঠিকমত করা যায় না। ত্বকে পচন ধরে। ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স ইনচার্জ সাথী হালদার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগুনে দগ্ধ শিশুকে দেরী করে হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডিপ বার্ন হয়ে যায়। নার্ভগুলো ড্যামেজ হয়। দেরী করে আসলে চামড়ায় পানি জমে যায়। স্লাব (আস্তরণ) জমে থাকে। ড্রেসিং করতে সমস্যা হয়।’

সাথী হালদার আরও বলেন, ‘ইলেক্ট্রিক বার্নে শরীরের ওপর বেশি প্রভাব পড়ে। সরাসরি শিশুর হার্ট, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

ওবায়দুল্লাহর পাশের বেড়ে ব্যান্ডেজ মোড়া শরীর নিয়ে শুয়ে আছেন তানহা। তার বাড়ি বান্দরবানের থানচিতে। তানহার মা জানান, চুলায় রান্না করার জন্য লাড়কি দিলে গায়ের জামায় আগুন লেগে যায় আমার মেয়ের। আমি পুকুরে ছিলাম। মেয়ের কান্না শুনে দৌড়ে এসে দেখি আমার মেয়ের শরীরে আগুন। জামা ছিঁড়ে ফেলি। বালতি দিয়ে শরীরে পানি দিতে থাকি। এরপরই চট্টগ্রাম মেডিকেলে আসার জন্য রওনা দিই। এখানে ভর্তি রয়েছে ১০দিন ধরে।

১৭ মাসের অর্চির বাড়ি রাঙামাটির রিজার্ভ বাজারে। চুলায় রাখা গরম তরকারিতে পড়ে দগ্ধ হয় অর্চি। ১ মার্চ দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি।

ফটিকছড়ির নারায়ণহাটের বাসিন্দা ১৭ মাসের সিদরাতুন মুনতাহা ধানসিদ্ধ পাতিলে পড়ে গিয়ে দগ্ধ হয়। চুলার পাশে খেলা করছিল সে। মুনতাহার মাথার পাশে বসা আছমা বেগম বলেন, ‘বারবার নিষেধ করার পরও কথা শুনছিল না। আমি ব্যস্ত ছিলাম। খেলার এক ফাকে আমার মেয়েটা ধানসিদ্ধ পাতিলে হাত দিতে গেলে গায়ে আগুন লাগে। আমরা পানি ঢেলে আগুন নেভাই। বাড়ির পাশের ডাক্তারকে দেখিয়ে ড্রেসিং করাই। তার ১ দিন পর চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করাই।’

বাঁশখালীর ১২ বছরের জান্নাতুল ইলেক্ট্রিক শকে দগ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি হয় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি। ২৬ দিন ধরে ভর্তি আছে সাতকানিয়া থেকে আসা আইভী (৭)। দিয়াশলাই নিয়ে উঠোনের খড়-পাতায় আগুন লাগাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয় সে। আগুনে তার শরীরে ৩০ শতাংশ পুড়ে গেছে। চুলার আগুনে দগ্ধ ১ বছর ৩ মাসের জুনায়েদের পুরো শরীর ব্যান্ডেজ দিয়ে মোড়ানো। পাশে মা-বাবা বসে আছেন।

১ বছর ৪ মাসের সুমাইয়া বিবি ভর্তি আছেন ৭ মার্চ থেকে। তার বাড়ি টেকনাফে। সুমাইয়ার মা রহিমা জানান, ‘ইফতারের পেঁয়াজু বানানোর পর চুলার ওপর গরম তেলের কড়াই ছিল। সেই কড়াইয়ে হাত দিলে দগ্ধ হয় সুমাইয়া।’

৩৬ নম্বর বার্ন ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার লিটন কুমার পালিত বলেন, ‘আগুনে শিশু দগ্ধের ঘটনা দিনের পর দিন বাড়ছে। আগে শীতকালে সংখ্যাটা বেশি থাকলেও বর্তমান সময়ে সারাবছরই শিশু আগুনে দগ্ধ হয়ে ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছে। যেটি উদ্বেগের বিষয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিশুরা আগুনে পুড়ছে মূলত রান্না করার পর গরম চুলার আগুনে, কড়াইয়ের গরম তেল, ফুটন্ত পানি, দিয়াশলাই দিয়ে খেলা, আর ইলেক্ট্রিক শকে।’ লিটন কুমার পালিত বলেন, ‘আমি বলবো, শিশুরা দগ্ধ হচ্ছে বিশেষ করে মায়েদের অসচেতনতায়। আমি সবসময় বলি পানি গরম করতে হবে কেটলিতে। তাহলে শিশু যদি এটা ধরেও গায়ে পড়বে না। আর রান্নাঘরে কখনও বাচ্চা আলাউড হবে না। কিন্তু আমাদের দেশে মায়েদের দুর্ভাগ্যই চরম বলা যায়, কোলে বাচ্চা নিয়ে চুলায় রান্না করতে হয়। কিন্তু কোনোভাবেই বাচ্চাদের রান্নাঘরে প্রবেশ করানো যাবে না। বিশেষ করে যখন বাচ্চা হামাগুড়ি কিংবা এর পরের স্টেজে হাঁটতে শিখে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm