চট্টগ্রাম রেলে ‘ভাই ভাই লন্ড্রি’র দরপত্র বাতিলের সুপারিশ বহাল, জালিয়াতি করেন পশ্চিমেও

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) দপ্তরে দরপত্র জালিয়াতির ঘটনায় সর্বনিম্ন দরদাতার কাজ বাতিলের সুপারিশ বহাল রাখা হয়েছে।

বুধবার (২১ মে) ডিসিও তৌষিয়া আহমেদ দেওয়া প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সেই সর্বনিম্ন দরদাতার দরপত্র বাতিলের আদেশ বহাল রাখা হয়।

জানা গেছে, ‘ভাই ভাই লন্ড্রি’র স্বত্বাধিকারী ওয়ালিউর রহমান বিভাগীয় বাণিজ্যিক দপ্তরের ঠিকাদার। রেলের প্রথম শ্রেণি কোচের সিপ্লাই বেডের চাদর-কম্বল ধোলাই কাজে গত ২৪ এপ্রিল ‘ভাই ভাই লন্ড্রি’ ৫৯ লাখ টাকায় সর্বনিম্ন দরদাতা হন। কিন্তু তারা শর্ত না মেনে মিথ্যা তথ্য দেন। পরে রেলের কর্মকর্তাদের তদন্ত প্রতারণার বিষয়টি উঠে আসে। সর্বনিম্ন দরদাতা ‘ভাই ভাই লন্ড্রি’র কোনো নিজস্ব দোকান না থাকলেও তারা রেলের জায়গা ‘দখল করে’ গড়ে ওঠা ‘এসএম ওয়াশিং সেন্টার’র ঠিকানা ব্যবহার করে। এসএম ওয়াশিং সেন্টারটি আইস ফ্যাক্টরি রোডের মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের বিপরীতে অবস্থিত। তথ্য যাচাই করতে গিয়ে তাদের এমন প্রতারণা ধরা পড়ে রেলের মাঠ পর্যায়ের কমিটির হাতে।

পরে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা ‘মেসার্স মদিনা শালকর’র স্বত্বাধিকারী মোশাররফ হোসেনের যাবতীয় কাগজপত্র যাচাই করে তাদের ৬৩ লাখ টাকায় ধোলাইয়ের কাজ দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ৭০ লাখ টাকায় এতে তৃতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হয় ‘তাকবীর’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

এ নিয়ে দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনে ‘রেলের চাদর-কম্বল ধোলাইয়ে ‘ভাই ভাই লন্ড্রি’র অভিনব প্রতারণা, শেষমেশ বাতিল!’—শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এদিকে গত মঙ্গলবার (২০ মে) কাজ না পেয়ে দলবল নিয়ে ডিসিও দপ্তরে ঢুকে পড়েন ঠিকাদার, কর্মকর্তা-কর্মচারী লাঞ্ছিতও করেন। ঠিকাদার ওয়ালিউর রহমানের এমন আচরণের অবাক হয়ে যান ডিসিও দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

‘ভাই ভাই লন্ড্রি’র দরপত্র বাতিল হওয়ার পর কাজটি পায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা ‘মদিনা শালকর’। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মোশাররফ হোসেন বলেন, ভাই ভাই লন্ড্রি’র দরপত্র বাতিল হওয়ার পর কাজটি আমি পেয়েছি। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশে ফাইলে জিএম স্বাক্ষর করেছেন।’

জালিয়াতি করেন পশ্চিমেও

রেলওয়ের মহাপরিচালকের কার্যালয়ের পার্সোনেল-২ শাখার উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে গত ১৮ মে ওয়ালিউর রহমানের দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়।

৬ মে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে পাঠানো এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয় ওয়ালিউর রহমান বিভিন্ন অনৈতিক কাজের পাশাপাশি রেলের পশ্চিমাঞ্চলে প্রশাসনিক কাজে কর্মকর্তাদের ওপর বল প্রয়োগসহ কাজে বিঘ্ন করে আসছেন। অভিযোগ আরও উল্লেখ করা হয়—ওয়ালিউর রহমান ২০২০ সালে ডিটিএস লালমনিরহাট দপ্তরে ৩টি দরপত্রের ‘ওয়াহদিকা সার্ভিস’র স্বত্বাধিকারী পরিচয়ে তিনি জাল পে-অর্ডার ও জাল অভিজ্ঞতা সনদ দাখিল করেন।

রেলের উভয় অঞ্চলের ক্লিনিংয়ের কাজ ওয়ালিউর ২-৩ জনকে সঙ্গে নিয়ে একাই করে আসছেন। কাজ না করে ভয়-ভীতি দেখিয়ে বিলও আদায় করতেন তিনি। এছাড়া ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে তিনি পেশিশক্তির জোরে কাজ আদায় করতেন এবং বর্তমানেও তিনি বহাল তবিয়তে আছেন।

এসব অভিযোগের কারণে ঠিকাদার ওয়ালিউর রহমানকে কালোতালিকাভুক্তির সুপারিশ করা হয়।

জেএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm