চাকসুতে শিবিরের ‘ডাবল জয়’: ভিপি রনি, জিএস সাঈদ, ছাত্রদলের সান্ত্বনা এজিএস
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতেছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ভিপি (সহসভাপতি) প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন রনি এবং জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে সাঈদ বিন হাবিব। এজিএস পদে জিতেছেন ছাত্রদলের প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান তৌফিক।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ১৪টি আবাসিক হল ও একটি হোস্টেলের ঘোষিত ফলাফলে ছাত্রশিবির সমর্থিত ভিপি (সহসভাপতি) প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন রনি পেয়েছেন ৬ হাজার ৫৯৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন পেয়েছেন ৩ হাজার ৭৮২ ভোট।
জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ বিন হাবিব পেয়েছেন ৬ হাজার ৬১৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী মো. শাফায়াত পেয়েছেন ২ হাজার ২৭২ ভোট।
এজিএস (সহ সাধারণ সম্পাদক) পদে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান তৌফিক পেয়েছেন ৫ হাজার ৭৭২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন মুন্না পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৮৪ ভোট।
ভোটে নানান নাটকীয়তা
চাকসু নির্বাচনে এবার ভোটারসংখ্যা ছিল প্রায় ২৭ হাজার ৫১৬ জন। এর মধ্যে ছাত্রী সংখ্যা ১১ হাজার ১৫৬। চাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে ২৬ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৪১৫ প্রার্থী। কেন্দ্রীয় সংসদে ভিপি পদে ২৪ জন, জিএস পদে ২২ জন ও সহসাধারণ সম্পাদক পদে ২২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। অন্যদিকে ১৪টি হল ও ১টি হোস্টেলে প্রার্থী ছিলেন ৪৯৩ জন।
চাকসু নির্বাচনে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হয়। শুরুতে আধা ঘণ্টার বিলম্ব হলেও ভোটের সময় কোনো বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি। তবে ভোট চলাকালে অমোচনীয় কালি ব্যবহার না করা, বিলম্বে ভোট শুরু, স্বাক্ষরবিহীন ব্যালটে ভোট দেওয়া এবং কেন্দ্রের ভেতরে প্রচারণা চালানোর মতো অভিযোগ ওঠে।
ভোট শেষে একাধিক প্যানেল অনিয়মের তদন্ত দাবি করে। এর মধ্যে ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্ট সমর্থিত প্যানেল ‘রেভ্যুলেশন ফর স্টেট অব হিউম্যানিটি’ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়।
চাকসু নির্বাচনে প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোট দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনারে প্রধান অধ্যাপক মনির উদ্দিন। এর মধ্যে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনে ৬৭ দশমিক ১৭ শতাংশ, আইটি ভবনে ৭২ শতাংশ এবং বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে ৬৯ শতাংশ ভোটারের ভোট পড়েছে বলে জানান তিনি।
ভোট কারচুপির অভিযোগে উপ-উপাচার্য অবরুদ্ধ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হল সংসদ নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মো. কামাল উদ্দিনকে অবরুদ্ধ করে রাখেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ সময় উত্তেজনা চলার পর রাত সোয়া ৩টার দিকে তিনি বাসায় ফেরেন।
বুধবার রাত ১টার দিকে ছাত্রদল অভিযোগ তোলে, সোহরাওয়ার্দী হলে তাদের সমর্থিত সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থীকে কারচুপির মাধ্যমে পরাজিত করা হয়েছে। তারা ভোট পুনর্গণনার দাবি জানিয়ে প্রকৌশল অনুষদের আইটি বিল্ডিংয়ের ৩১২ নম্বর কক্ষে অবস্থান নেন।
রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উপ-উপাচার্যকে বের করে নিতে চাইলে ভবনের ফটকেই আবারও বাধা দেয় ছাত্রদল কর্মীরা।
সংগঠনটির অভিযোগ, ভিপি পদে ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থী জমাদিউল আওয়াল ১ হাজার ২০৩ ভোট পেলেও, ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থী নেয়ামত উল্লাহ ১ হাজার ২০৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী ঘোষিত হন। তারা অভিযোগ করেন, ফল বদলে দেওয়া হয়েছে।
প্রধান ফটকে দুই দল মুখোমুখি
চাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের অক্সিজেন–হাটহাজারী সড়কের এক নম্বর গেট এলাকায় রাত থেকে মুখোমুখি অবস্থান নেয় বিএনপি–ছাত্রদল ও জামায়াত–ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা।
ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা সেখানে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। ওই সময় তাদের কাছাকাছি অবস্থানে ছিল ছাত্রশিবিরের সমর্থকেরা। তবে ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিল।