সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে এবার চট্টগ্রামের পটিয়ায় সাজসজ্জায় মুখরিত হয়ে উঠেছে পূজামণ্ডপগুলো। উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকায় মোট ২০০টি মন্ডপে এবারের দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে প্রায় সবকটি মণ্ডপেই প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতিমাশিল্পীরা শেষ বারের মতো তুলির আঁচড়ে সাজিয়ে তুলছেন দেবী দুর্গাকে। প্রতিমা শিল্পীরা তাদের নিপুণ হতের ছোঁয়ার তুলিতে আঁচড় দিয়ে মায়ের মুখমণ্ডলকে আরও জীবন্ত করে তুলছেন। এই পূজা উৎসব শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং স্থানীয় সমাজের ঐক্য ও সাংস্কৃতিক উন্মেষের প্রতীক।
পূজার প্রস্তুতি নিয়ে স্থানীয় পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা জানান, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা সম্পন্ন করতে সকল আয়োজনই এখন প্রায় চূড়ান্ত। মণ্ডপ সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি ভক্তদের জন্য শৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা হচ্ছে।
পটিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মান্না কুমার দেব বলেন, এবার পটিয়ায় সর্বমোট ২০০টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে, শুধু শেষ মুহূর্তের রঙ ও সাজসজ্জা চলছে। আমরা প্রত্যাশা করছি, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ধর্মীয় সৌহার্দ্য বজায় রেখে এ উৎসব উদযাপিত হবে।
পটিয়া পৌরসভা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক জুয়েল দে বলেন, আমাদের লক্ষ্য শুধু পূজা নয়, সম্প্রীতি ও সাম্যের বার্তা ছড়ানো। এ লক্ষ্যে আমাদের সব ধরনের প্রস্ততি শেষ পর্যায়ে।
জয়কালী শিল্পালয়ের প্রতিমা শিল্পী নয়ন দাশ বলেন, আমরা দিন-রাত পরিশ্রম করে প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। এখন শেষ মুহূর্তে প্রতিমায় রঙের কাজ চলছে। ভক্তরা যাতে সুন্দর প্রতিমা দেখতে পারেন, সেজন্য আমরা সবটুকু মনের মাধুরী ঢেলে কাজ করছি।
মৃৎশিল্পী অভি দাশ বলেন, এবারের প্রতিমাগুলোতে আমরা বিশেষভাবে মায়ের ক্ষিপ্রতা ও শক্তির প্রতিফলন ঘটিয়েছি। শেষ তুলির আঁচড় দিয়ে যেন মা নিজেই জীবন্ত হয়ে উঠছেন। ভক্তদের জন্য এটি একটি অবিস্মরণীয় দৃশ্য হবে এবারের পূজায়।
এদিকে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানুর রহমান বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ টিমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত থাকবে।
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুজ্জামান বলেন, পূজার সময় যেন কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে আমরা সজাগ রয়েছি। ইতোমধ্যে পুলিশ, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বলেন, দুর্গাপূজা কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিলনমেলা। পূজা মণ্ডপগুলোকে ঘিরে গ্রামীণ জনপদে সৃষ্টি হবে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের এক উৎসবমুখর পরিবেশ। এবার পটিয়ায় ২০০টি মন্ডপে দেবী দুর্গার আবাহনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে মহাসপ্তমীর পূজা। এরপর মহাষ্টমী, নবমী ও বিজয়া দশমীতে ভক্তরা দেবীর পূজা অর্চনায় অংশ নেবেন।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, আমরা সকল পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে উৎসবটিকে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ করব। যেকোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া বিসর্জনের সময়সীমা মেনে চলা এবং জরুরি সংযোগের জন্য হেল্পলাইন (০১৩২০-১০৮৩৯৮) চালু করা হয়েছে।
ডিজে