চট্টগ্রামের পার্লারে তরুণীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর অন্তরালে ছিল প্রেম-প্রতারণা

দুই বছরের পরকীয়া শেষে মর্মান্তিক পরিণতি

চট্টগ্রামের ব্যস্ত নগরীতে দিনের আলো ম্লান হতেই এক মর্মান্তিক ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ে। বিউটি পার্লারের ওয়াশরুমে অস্বাভাবিকভাবে প্রাণ হারালেন প্রিয়াংকা বিশ্বাস (৩৫)। বাইরে থেকে সাধারণ মৃত্যুর মতো মনে হলেও, তদন্তে বেরিয়ে আসে গোপন সম্পর্কের অন্ধকার দিক। দুই বছরের পরকীয়ার টানাপোড়েন, ভাঙা বিশ্বাস আর প্রতারণার জালে শেষ হলো এক নারীর জীবন। প্রেমিক প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম এখন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার, মুখোমুখি হচ্ছেন আইনের কঠিন প্রশ্নের।

পুলিশ বলছে, দুই বছরের গোপন পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির জের ধরে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে বিউটি পার্লারের ওয়াশরুমে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছে প্রিয়াংকা বিশ্বাসকে। আর সেই অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রেমিক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (৩৫)। প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার দেওয়ানপুর গ্রামের তালুকদারের বাড়ীর রবিউল আলমের ছেলে।

যেভাবে শুরু হয়েছিল সম্পর্ক

এজাহার সূত্রে জানা যায়, প্রিয়াংকা বিশ্বাসের স্বামী সজীব কান্তি দত্ত থাকলেও, জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে তার গোপন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে দুই বছর আগে। ২৪ ও ২৫ আগস্ট তারা ঢাকার খিলক্ষেত এলাকায় এক বন্ধুর বাসায় এক সাথে ছিলেন এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়ান।

ঢাকা থেকে ফিরে এসে তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে—কারণ জাহাঙ্গীরের পারিবারিকভাবে অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়। এই খবরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন প্রিয়াংকা। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয়। হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট হয় তর্কবিতর্কে। পরে বড় আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।

আত্মহত্যার দিন

৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে প্রিয়াংকা তার কর্মস্থল সানমার ওশান সিটির পাশের ‘নাদিয়া’স মেকওভার’ নামক বিউটি পার্লারের ভেতরে যান। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মৃত্যুর আগে তিনি দীর্ঘ সময় হোয়াটসঅ্যাপে প্রেমিক জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা বলেন। পরে বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে ওয়াশরুমের ঝর্ণার সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরিবার তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে মৃত ঘোষণা করেন।

গ্রেপ্তার ও স্বীকারোক্তি

তদন্তে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় জাহাঙ্গীর আলমের অবস্থান শনাক্ত করে ২৩ সেপ্টেম্বর কর্ণফুলীর ইছানগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পরকীয়া প্রেম ও ঢাকায় একসাথে থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তা।

জানা গেছে, প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার টেকনোলজি থেকে পড়ালেখা শেষ করে একটি সিমেন্ট কোম্পানিকে চাকরি করতেন।

দুই মাস আগে তিনি কোম্পানিটির চাকরি ছাঁড়েন। তবে তিনি সহকর্মীদের জানিয়েছিলেন জার্মানি চলে যাবেন।

পুলিশ যা বলছে

পাঁচলাইশ থানার এসআই ফারুক আহমদ জানান, প্রিয়াংকার আত্মহত্যায় জাহাঙ্গীর আলম সরাসরি প্ররোচক হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারা (আত্মহত্যায় প্ররোচনা) অনুযায়ী মামলা রুজু হয়েছে।

পাঁচলাইশ মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর এর বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। যার থানা মামলা নম্বর ২৭/১৭৭।

জেজে/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm