নবীপ্রেমেই পরিপূর্ণ ঈমান: সাহাবায়ে কেরামের অনন্য দৃষ্টান্ত

আল্লাহকে ভালোবাসা ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের মূল চাবিকাঠি হলো রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে ভালোবাসা ও তাঁর আনুগত্য করা। ইসলাম স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, রাসুলের (সা.) ভালোবাসা ছাড়া কোনো মুসলমানের ঈমান পূর্ণ হয় না। নবিজীর (সা.) প্রতি এ ভালোবাসা ও আনুগত্যের শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন সাহাবায়ে কেরাম। তাঁদের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে নবির (সা.) প্রতি অগাধ ভালোবাসা, আত্মত্যাগ ও অনুগত্যের প্রতিফলন পাওয়া যায়।

হজরত ওমর (রা.) একবার নবিজীকে বলেছিলেন, ‘আপনাকে আমি নিজের প্রাণের চেয়ে কম ভালোবাসি।’ তখন রাসুল (সা.) স্পষ্ট করে বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে প্রাণ থেকেও প্রিয় হয়ে উঠি, ততক্ষণ তোমার ঈমান পূর্ণ হবে না।’ পরে ওমর (রা.) শপথ করে বললেন, নবিজী তাঁর কাছে এখন জানের চেয়েও বেশি প্রিয়। তখনই নবিজী ঘোষণা করলেন, ‘এখন তোমার ঈমান পূর্ণ হয়েছে।’

হজরত আনাস (রা.)র বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পূর্ণ ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার বাবা-মা, সন্তান-সন্ততি এবং সব মানুষের চেয়েও বেশি প্রিয় হয়ে উঠি।’

সাহাবাদের নবীপ্রেমের কিছু উদাহরণ

আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ধন-সম্পদসহ সব কিছুই ত্যাগ করেছিলেন প্রিয় নবিজীর (সা.) জন্য। মক্কা থেকে মদিনার পথে নবিজীর তৃষ্ণা নিবারণে রাখালের কাছ থেকে ভেড়ার দুধ এনে দিলেন। নবিজী দুধ পান করতেই তিনি বললেন, ‘নবিজীকে তৃপ্ত হতে দেখে আমিও তৃপ্ত হয়ে গেলাম।’

হজরত ওমর (রা.) রাসুলের ভালোবাসাকে নিজের ভালোবাসার ওপরে স্থান দিতেন। একবার ছেলে আবদুল্লাহ জানতে চান, কেন উসামা ইবনে যায়দ (রা.)কে তাঁর চেয়ে বেশি ভাতা দেওয়া হচ্ছে? উত্তরে হজরত ওমর বলেছিলেন, ‘উসামা নবিজীর কাছে তোমার চেয়ে বেশি প্রিয় ছিলেন। আমি কখনোই নিজের ভালোবাসাকে নবিজীর ভালোবাসার ওপরে স্থান দিতে পারি না।’

হজরত আব্বাস (রা.) বলেছিলেন, আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করলে তাঁর নিজের বাবার ইসলাম গ্রহণের চেয়েও বেশি আনন্দ পেয়েছেন। কারণ, তিনি জানতেন এতে নবিজী খুশি হবেন।

হজরত আলী (রা.) রাসুলের প্রতি ভালোবাসায় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হিজরতের রাতে নবিজীর বিছানায় শুয়ে ছিলেন।

হজরত সাওয়াদ (রা.) বদরের যুদ্ধে নবিজীর কাছ থেকে প্রতিশোধের অজুহাতে নবিজীকে জড়িয়ে ধরেন ও চুম্বন করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যুদ্ধে হয়তো বাঁচব না। মৃত্যুর আগে অন্তত আপনাকে ছুঁতে চেয়েছি।’

হজরত সুমাইয়া (রা.) ওহুদের যুদ্ধে স্বামী, ভাই ও বাবা শাহাদাতের খবর শোনার পর কোনো শোক প্রকাশ না করে শুধু জানতে চাইলেন নবিজী কেমন আছেন। নবিজীর সুস্থতার খবর পেয়ে বললেন, ‘তাহলে আর কোনো দুঃখ নেই, সব ভুলে গেছি।’

হজরত উম্মে হাবিবা (রা.) রাসুলুল্লাহর (সা.) বিছানায় বসতে চাওয়া বাবাকে বারণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি মুশরিক, অপবিত্র। আমি চাই না আপনি নবিজীর বিছানায় বসুন।’

হজরত আবু তালহা (রা.) উহুদের যুদ্ধে নিজের শরীর ঢাল বানিয়ে নবিজীকে রক্ষা করেছিলেন। তাঁর দেহে অসংখ্য আঘাত এলেও নবিজীর গায়ে একটি তীর পড়তে দেননি।

উপসংহার

সাহাবায়ে কেরামের জীবন থেকে বোঝা যায়, নবীপ্রেম শুধু মুখের কথা নয়, বরং জান-প্রাণ ও ধন-সম্পদ বিলিয়ে দেওয়ার নাম। রাসুলুল্লাহর (সা.) প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্য যত গভীর হবে, আল্লাহর সন্তুষ্টিও তত অর্জিত হবে। কুরআনে বলা হয়েছে, ‘বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং গুনাহ মাফ করবেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ৩১)।

লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm