মিছিলে নয়, মসজিদে থেকেও আসামি বিএনপি নেতা, চট্টগ্রামে ওসি-ডিসির বিরুদ্ধে ‘চাঁদা’ দাবির অভিযোগ
ঠিক যে সময় চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় মিছিল করছিল নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ, ওই সময় স্থানীয় মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন নগর বিএনপির পরিচিত নেতা। অথচ সে ঘটনায় হওয়া সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় তাকে আসামি বানিয়ে দেওয়া হয়। মিছিলে তিনি ছিলেন না, আছে ভিডিও প্রমাণও, তবু পুলিশ তাকে মামলায় ঢুকিয়ে দেয়। বিএনপি নেতার অভিযোগ, থানার ওসি ও উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা টাকার জন্য পরিকল্পিত হয়রানি চালাচ্ছেন। আগে একবারে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছিল, পরে আরও ১০ লাখ টাকা দাবি, সম্প্রতি বৈঠকের সময় নেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আজাদ ও পশ্চিম জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূইয়ার বিরুদ্ধে এমন সব গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন নগর বিএনপির নেতা মাহবুব আলম। তার দাবি, ঘুষ ও চাঁদা না দেওয়ায় তাকে ‘মিছিলে না থেকেও’ সন্ত্রাসবিরোধী মামলার আসামি করা হয়েছে।

বিএনপি নেতার অভিযোগ
অভিযোগকারী মাহবুব আলম (৫২) নগরীর ১২ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি। তিনি ডবলমুরিং থানার সিটিজেন ফোরামেরও সদস্য। তার দাবি—ঘুষ দাবি; ডবলমুরিং মডেল থানার সাবেক ওসি তদন্ত সাফিউল ইসলাম তার কাছ থেকে শুরুতেই একবারে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। পরে আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করেন।
বর্তমান ওসি বাবুল আজাদের ভূমিকা হলো সম্প্রতি থানার সিটিজেন ফোরামের বৈঠকে যোগ দিতে গেলে বের হওয়ার সময় বাবুল আজাদও টাকা দাবি করেন। একটা কাজে কিছুদিন আগেও ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন।
মামলায় নাম ঢোকানো হয় যেভাবে
গত ১৯ সেপ্টেম্বর আগ্রাবাদের হাজীপাড়া এলাকায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগের মিছিলে তিনি উপস্থিতই ছিলেন না। নামাজে ছিলেন, তার ভিডিও প্রমাণও আছে। তবুও মামলা তালিকায় ৩৬ নম্বরে তার নাম দেওয়া হয়েছে।
পরদিন থানার এসআই মিজানুর রহমান বাদী হয়ে ৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। এছাড়া আরও ১৫–২০ জন অজ্ঞাত আসামি করা হয়। মামলায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সেই মামলাতেই মাহবুব আলমের নাম ঢোকানো হয়।
অভিযোগকারী ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা মাহবুব আলম বলেন, ‘আমি বিএনপির নেতা হলেও ডবলমুরিং থানায় সবসময় সহযোগিতা করেছি। সিটিজেন ফোরামের সদস্য হিসেবেও কাজ করি। অথচ আমাকে টাকার জন্য হয়রানি করা হচ্ছে। আরও অনেক ঘটনা। তবে কমিশনার মহোদয়কে জানালে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।’
পুলিশের বক্তব্য
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আজাদ বলেন, ‘মামলা হয়েছে। এখন তদন্তে যা হওয়ার তাই হবে। আমার বিরুদ্ধে যে কেউ অভিযোগ করতেই পারে। আমি এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
সিএমপি পশ্চিম জোনের ডিসি হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূইয়া বলেন, ‘মামলায় বাদী পুলিশ। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ঘটনাস্থলে অনেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে। কেউ অর্থদাতা, কেউ প্রশ্রয়দাতা বা কেউ মিছিলে অংশ নেয়। বিভিন্ন সোর্স থেকে তথ্য আসায় তদন্তে যাচাই করা হচ্ছে। দোষী না হলে কাউকে প্রসিকিউট করা হবে না।’
পুলিশ ডিসি কবির ভূইয়া আরও বলেন, ‘উনিও গত ১৭ বছর ধরে বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য করেছে আওয়ামী লীগের লোকজনের সাথে যেমন মোর্শেদুল আলম, আ জ ম নাছির, সাইফুল ও কমিশনার ছাবেরের সাথে। তথ্য উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা হবে।’
বিএনপির ভেতরে প্রতিক্রিয়া
এ ঘটনাকে ঘিরে নগর বিএনপির ভেতরে চলছে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনা। নেতারা বলছেন, একজন বিএনপি নেতা যিনি থানার সিটিজেন ফোরামের সদস্য, তাকেই যদি ‘চাঁদা না দেওয়ায়’ হয়রানির শিকার হতে হয়, তবে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী হবে?
সিএমপি কমিশনারের কাছে মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ জানানোর পর এখন দেখার বিষয়—এই অভিযোগের সত্যতা কতটা যাচাই হয়।