মিয়ানমারের বুলেট উড়ে এসে পড়ল বাংলাদেশের বাড়িতে, টিন ছিদ্র, নারী আহত

আতঙ্কে রাতে বিদ্যুৎ নিভিয়ে থাকে মানুষ

বিকেলের অস্পষ্ট নীরবতা কেটে হঠাৎ করেই ছুটে এলো গুলির আঘাত। শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকাল ৫টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের তেচ্ছি ব্রিজ এলাকায় ওপার থেকে ছোঁড়া দুই রাউন্ড গুলি জনবসতিতে এসে পড়ে। মুহূর্তেই গ্রামের মানুষজনকে আতঙ্কে ফেলে দেয় ঘটনাটি।

গুলির একটি স্থানীয় এক কম্পিউটার দোকানের টিনের ছাদ ভেদ করে দোকানের ভেতরে গিয়ে পড়ে; অপরটি নিকটবর্তী একটি বাড়ির ছাউনি ছিদ্র করে প্রবেশ করে। গুলির ছিটকে যাওয়া অংশটি ওই বাড়িতে থাকা ছেনুয়ারা বেগম (২৭) নামে এক নারীর ওপর এসে আঘাত করে। স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তিনি বর্তমানে বাড়িতেই বিশ্রাম করছেন, পরিবারের বরাত দিয়ে জানা গেছে।

স্থানীয় এক দোকানমালিক বলেন, ‘আমরা দোকান বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, হঠাৎ গুলি এসে দোকানের টিনে লাগে। সবাই ভয়ে দৌড়েই পালাই। পরে দেখি দোকানের ছাদে বিশাল ছিদ্র।’

অন্য এক বাসিন্দা জানান, ‘রাতে শিশুরা কাঁদতে থাকে, সবাই ঘরের ভেতর লাইট নিভিয়ে দেয়। ওপারের যুদ্ধের শব্দ প্রায়ই শুনি, কিন্তু আপাতত গুলি এসে পড়ায় সবাই আতঙ্কে।’

টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জায়েদ নুর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আমরা দুটি গুলির খোসা এবং টিনে ছিদ্রের চিহ্ন পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের স্ট্রে বুলেট বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পড়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে, নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’

বিজিবি টেকনাফ ব্যাটালিয়নের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু ও নিকটবর্তী এলাকায় গতকয়েকদিন ধরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির তীব্র গুলিবর্ষণ চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় সীমান্ত সংলগ্ন কিছু এলাকায় মাঝে মাঝে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে এবং কয়েকবার গুলি সীমান্তের কাছাকাছি এসে পড়েছে। বর্তমানে বিজিবি সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করেছে এবং স্থানীয়দের অযথা সীমান্তঘেঁষা এলাকায় না যেতে সতর্ক করা হয়েছে।

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই ওপারের যুদ্ধের শব্দ শোনা যায়। মানুষ আতঙ্কিত। অনেক পরিবার রাতেই অন্যত্র চলে যাচ্ছে। শিশুরা কাঁদে, রাত কাটছে ভয়ে।’

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, টেকনাফের হোয়াইক্যং, উলুবনিয়া, নাফ নদীর পাড় ও তেচ্ছিসহ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় গত কিছুদিন ধরেই মানুষ রাতে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে শুরু করেছে।

স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছে—সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে অপ্রয়োজনে যাওয়া বারণ, ঘুমন্ত অবস্থায় বাইরে রাখা মূল্যবান জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়া এবং সন্তানদের নিয়ে নিরাপদ স্থানে থাকা। আরও বলা হয়েছে, প্রয়োজন হলে স্থানীয় এমপিও বা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে।

ksrm