স্ত্রী-সন্তানের সামনে ৫ গুলিতে খুন যুবদল কর্মী, ১৮ দিনের মাথায় রাউজানে আবারও রক্তপাত

কবরস্থানে ওঁত পেতেছিল অস্ত্রধারীরা

চট্টগ্রামের রাউজানে আবারও গুলি হয়ে প্রাণ গেল এক রাজনৈতিক কর্মীর। স্ত্রী ও সন্তানের চোখের সামনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হয়েছেন মুহাম্মদ আলমগীর আলম (৫০)। আজ শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল পাঁচটার দিকে রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রাশিদার পাড়া সড়কে কায়কোবাদ জামে মসজিদের কবরস্থানের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আলমগীর বিএনপি নেতা গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আলমগীর পাশের রাশিদার পাড়া এলাকার এক আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াতে গিয়ে ফিরছিলেন। তিনি মোটরসাইকেলে ছিলেন, স্ত্রী ও সন্তান ছিলেন একটি অটোরিকশায়। পথের মধ্যে কবরস্থানের পাশে ওঁত পেতে থাকা একদল সশস্ত্র ব্যক্তি মোটরসাইকেল লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই আলমগীর নিহত হন। তাঁর শরীরে পাঁচটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানায় পুলিশ।

এ ঘটনায় আলমগীরের আত্মীয় মুহাম্মদ রিয়াদ (২৫) গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলাকারীরা মোটরসাইকেল ও অটোরিকশাযোগে রাঙামাটি সড়কের দিকে পালিয়ে যায়। এখনো তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

একাধিক মামলার আসামি ছিলেন আলমগীর

নিহত আলমগীরের বাড়ি ঢালার মুখ এলাকায়। তিনি আবদুস সত্তারের ছেলে। পুলিশ বলছে, আলমগীর অপরাধজগতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে একাধিক মামলায় জড়ানোর কারণে তাঁকে কয়েক দফা কারাভোগ করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর তিনি কারাগারে ছিলেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর মুক্তি পান।

রাজনৈতিক উত্তাপে টানটান রাউজান

রাউজানে কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে। এর আগে ৭ অক্টোবর বিএনপি কর্মী মুহাম্মদ আবদুল হাকিমকে গুলি করে হত্যা করা হয় হাটহাজারীর মদুনাঘাট এলাকায়। সেই ঘটনার রেশ কাটার আগেই আবারও ঘটে হত্যাকাণ্ড।

স্থানীয়দের আশঙ্কা, আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতা এ হামলার কারণ হতে পারে। পুলিশ বলছে, ঘটনাটি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিএনপির অভিযোগ

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, আলমগীর যুবদল কর্মী ছিলেন। দীর্ঘ কারাভোগের পর সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া আলমগীরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি অবিলম্বে হত্যাকারী ও নির্দেশদাতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

সহিংসতার বড় পরিসংখ্যান

৫ আগস্টের পর রাউজানে রাজনৈতিক সহিংসতায় মোট ১৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটে। এর মধ্যে ১২টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত। বিএনপির দুই পক্ষে অন্তত শতাধিক সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৩৫০ জনের বেশি মানুষ।

স্থানীয়দের মতে, পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনলে রাউজানে আরও অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ksrm