আমার স্বামী কি কোরবানের গরু, ফেসবুকে ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না
পুলিশের বিরুদ্ধে করা মামলার আবেদন খারিজ
‘কোনো জায়গায় কি নজির আছে, একজন রিমান্ডের আসামিকে গরুর মতো রশি বেঁধে এলাকায় এলাকায় মাইকিং করার? জিরো টলারেন্স ঘোষণা করতেছে ওসি আরিফ। আমার স্বামী কি কোরবানের গরু? আমার স্বামীকে এভাবে নিয়ে মাইকিং করতেছে! এগুলো মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং অপমানজনক’—ফেসবুক লাইভে এসে এমন বক্তব্য দিলেন চট্টগ্রামে ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না কোথায়।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ ভিডিও বার্তা দেন তামান্না।
এর আগে গত ৬ এপ্রিল রাতে জেলার রাউজান উপজেলার কদলপুর এবং ৭ এপ্রিল নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন এলাকায় সাজ্জাদকে হাতকড়া পেরিয়ে, গায়ে ভেস্ট ও মাথায় হেলমেট দিয়ে ‘সচেতনতামূলক’ মাইকিং করে পুলিশ। এ ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মাইকিং করে পুলিশ বলছে, ‘সন্ত্রাসী ও ত্রাস ছোট সাজ্জাদকে সিএমপি কমিশনার স্যারের নির্দেশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাষ্ট্রের কাছে কোনো সন্ত্রাসীর জায়গা হবে না। আপনাদের এলাকায় যদি কোনো সন্ত্রাসী নাড়াচাড়া দিয়ে ওঠে, তাহলে ছোট সাজ্জাদের মতো তাদের পরিণতি হবে।’
মুহুর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ভিডিওটি। এরপরই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে লাইভে এসে দুই মিনিটের ভিডিওবার্তা দেন তামান্না। তামান্না বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম, আমাকে সবাই চিনেন আমি সাজ্জাদ বউ তামান্না। কোনো জায়গায় কি নজির আছে একজন রিমান্ডের আসামিকে গরুর মতো রশি বেঁধে এলাকায় এলাকায় মাইকিং করার? জিরো টলারেন্স ঘোষণা করতেছে ওসি আরিফ। আমার স্বামী কি কোরবানের গরু? আমার স্বামীকে এভাবে নিয়ে মাইকিং করতেছে!’
তিনি আরও বলেন, ‘আসলে সাজ্জাদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড নাই, ওর জন্য কথা বলার কেউ নাইতো; আমিও মেয়ে মানুষ—দুই তিনটা মামলা দিয়ে বসে আছে। এখন আমি আপনাদের ওপর ছেড়ে দিছি। আপনাদের কি মনে হয়, এটা কি মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে না? আমার স্বামীকে এভাবে গরুর রশি দিয়ে বেঁধে এলাকায় এলাকায় নিয়ে গিয়ে অপমানি করা হচ্ছে, কেন? আমি আপনাদের কাছে এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম।’
ভিডিওবার্তা তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী যদি অপরাধী হয় তার বিচার আদালত করবে। ওসি আরিফ আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে নাই। আমার স্বামীকে সূচি গ্রেপ্তার করিয়েছে—এটা আমি বারবার বলেছি। বসুন্ধরা সিটিতে আমরা ঘুরতে গেছি, ওই অবস্থায় সূচি আমার স্বামীকে দেখে সিকিউরিটি রুমে নেওয়ার তিন ঘণ্টা পর পুলিশ আমাকে ও আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে। আমি পরে ছুটে আসি। আমার স্বামী যখন ‘তামান্না তামান্না’ বলে চিৎকার করছিলো, তখন আমার মোবাইল হারিয়ে যাওয়ায় পাঁচ মিনিটের জন্য নিচে নামছিলাম। একসাথেই গ্রেপ্তার হয়েছি। ওসি আরিফ বা সিএমপির কমিশনার আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করেনায়। কিন্তু ওরা সিম্পেথি নেওয়ার জন্য আমার স্বামীকে রাস্তায় নামিয়েছে। আমার স্বামীকে গুলি করে মারতে পারতেছে না?’
শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্রসহ ১৫টি মামলাও রয়েছে। বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফেসবুক লাইভে এসে পেটানোর হুমকি দিয়েছিলেন সাজ্জাদ। এরপর গত ২৯ জানুয়ারি তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেন নগর পুলিশ কমিশনার। গত ১৫ মার্চ ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিং মল থেকে সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেন লোকজন।
সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারের পর গত ৩০ মার্চ নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকায় একটি প্রাইভেট কারে ‘ব্রাশফায়ার’ করে দু’জনকে হত্যা করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এ ঘটনা সাজ্জাদের অনুসারীরা ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের একজন বখতিয়ার হোসেনের মা ফিরোজা বেগম বাকলিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় সাজ্জাদ ও তামান্না শারমিনসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। মামলার অন্য পাঁচ আসামি হলেন—মো. হাছান, মোবারক হোসেন, মো. খোরশেদ, মো. রায়হান ও মো. বোরহান।
এছাড়া ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর বিকালে চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়া এলাকায় দোকানে বসে চা পানের সময় তাহসীন নামে এক ইট ও বালু ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় চান্দগাঁও থানায় তাহসিনের বাবার করা মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ। সেই হত্যা মামলায় ৬ এপ্রিল সাজ্জাদকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
তামান্নার মামলার আবেদন খারিজ
চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), দুই উপপরিদর্শকসহ (এসআই) ছয়জনের বিরুদ্ধে সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শারমিনের করা মামলা খারিজ করেছেন আদালত।
রোববার (৬ এপ্রিল) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম খারিজের এ আদেশ দেন।
এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি গর্ভের সন্তান নষ্টের অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার আবেদন করেন তামান্না শারমিন। বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান, উপ-পরিদর্শক জগৎজ্যোতি দাস, মনিরুল ইসলাম, আরেক ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন বাবলা ও জাবেদ এবং পুলিশের সোর্স আনিকা ইসলামকে মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
মামলার আবেদনে তামান্না উল্লেখ করেন, গত ৫ ডিসেম্বর ভোরে স্বামী সাজ্জাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করতে নগরীর অক্সিজেন মিরপাড়া হাউজিং সোসাইটির ইউনূস টাওয়ারের ভাড়া বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। সাজ্জাদকে না পেয়ে তামান্নাকে নারী পুলিশ ছাড়া আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানার ওসি শারমিনকে লাঠি দিয়ে মারধর এবং এসআই জগৎজ্যোতি দাস তার পেটে লাথি মারেন। তিনি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকায় রক্তক্ষরণে ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যায়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে হাজির না করে ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় হাজির করেন। ৮ জানুয়ারি আদালত তাকে জামিন দেন। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা জানান গর্ভে থাকা ভ্রূণ নষ্ট হয়ে গেছে।
এছাড়া অভিযানের সময় পুলিশ তামান্নার ব্যবহৃত আইফোন, পাসপোর্ট জব্দ করলেও তা লিস্টে রাখা হয়নি বলে অভিযোগ তোলা হয়।
আরএ/ডিজে