ইউসিবিএলের ঋণকে ‘অস্ত্র’ বানিয়ে ৬০ কোটির বড় কারসাজি, আরও দুই মামলায় বউসহ জাবেদ

শিপব্রেকিং ঘুষ থেকে ওয়েল মার্ট কেলেঙ্কারি

ক্ষমতার আসনে বসেই কোটিপতি ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে শতকোটি টাকার কারসাজি করেছেন—এমন অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

অভিযোগ শুধু ঘুষ গ্রহণ নয়; ভুয়া প্রতিষ্ঠান খোলা, ঋণ জটিলতা তৈরি করে অর্থ আদায় এবং পরবর্তীতে বিদেশে পাচারেরও কৌশল অবলম্বন করেছিলেন তিনি ও তার ঘনিষ্ঠরা।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের উপ সহকারি পরিচালক মো. রুবেল হোসেন বাদী হয়ে মামলাগুলো দায়ের করেন।দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ সহকারি পরিচালক সবুজ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

প্রথম এজাহার: ৫৫ কোটি টাকার শিপব্রেকিং ঘুষ

প্রথম মামলার (নং–২৫/২০২৫) অভিযোগে বলা হয়, চট্টগ্রামের এইচ এম শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে ঋণ অনুমোদনের নামে ৫৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন সাবেক মন্ত্রী ও তার সহযোগীরা। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) আগ্রাবাদ শাখার ঋণের অর্থ কৌশলে ভুয়া প্রতিষ্ঠান ‘ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং’–এর নামে স্থানান্তর করা হয়। পরে টাকা তুলে নেওয়া হয় ঘুষ বাবদ।

দ্বিতীয় এজাহার: ওয়েল মার্টের ৫ কোটি টাকার ফাঁদ

দ্বিতীয় মামলায় (নং–২৬/২০২৫) চট্টগ্রামের ওয়েল মার্ট লিমিটেড (টেক্সটাইল ইউনিট) থেকে ৫ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০২১ সালে ইউসিবিএল জুবিলি রোড শাখা থেকে ২০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদনের পর ওই অর্থের একটি অংশ একইভাবে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আসামিদের হাতে পৌঁছে যায়।

দুই মামলায় মোট অঙ্কে ৬০ কোটির দুর্নীতি

ইউসিবিএল আগ্রাবাদ শাখা থেকে অনুমোদিত ৫৫ কোটি টাকার ঋণের অংশ বিশেষ চাপ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে উৎকোচ বাবদ আদায়, বিদেশে পাচার ও মানিলন্ডারিং। সময়কাল ছিলো যার ২০১৭–২০২০ সালে বিভিন্ন লেনদেনে।

পরে ইউসিবিএল জুবিলি রোড শাখা থেকে ২০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদনের পর সরাসরি ৫ কোটি টাকা ভুয়া প্রতিষ্ঠান ইম্পেরিয়াল ট্রেডিংয়ের নামে স্থানান্তর ও উত্তোলনপূর্বক ঘুষ বাবদ গ্রহণ এবং মানিলন্ডারিং করা হয়েছে। ২০২১ সালের ঋণ আবেদন ও বিতরণের পরবর্তী সময়ে। এমন দুই অভিযোগে দুই মামলায় অভিযোগের টাকার অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৬০ কোটি টাকা।

আসামির তালিকা একই

দুই মামলারই প্রধান আসামি সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তার স্ত্রী রুখমিলা জামান, আরামিট গ্রুপের পরিচালক সৈয়দ কামরুজ্জামান, কর্মকর্তা মো. আব্দুল আজিজ ও মো. ইয়াছিনুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। তাদের সহযোগিতায় অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার কথা এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।

মামলাগুলো দায়ের হয়েছে—দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধিত ২০১৫) এর ৪(২)(৩) ধারা,
দণ্ডবিধি ১৬২/ ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারায়।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের উপ সহকারি পরিচালক মো. রুবেল হোসেন জানান, তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাবেক মন্ত্রীসহ জড়িত সবাইকে ঘুষ গ্রহণ, অর্থ আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিংয়ের সর্বোচ্চ শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm