এক স্কুলে চাকরি, অন্য স্কুলে বেতন—চট্টগ্রামে এক শিক্ষিকার কাণ্ডে ৫০০ শিক্ষার্থী বিপাকে

দুই দফা ডেপুটেশনের ৮ মাসই অনুমোদন ছাড়া

চট্টগ্রামের সরকারি প্রাথমিক শিক্ষায় ভয়াবহ অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে এক শিক্ষকের কর্মকাণ্ডকে ঘিরে। পলি চৌধুরী নামের ওই সহকারী শিক্ষক মূল কর্মস্থল হাছান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বছরের পর বছর অনুপস্থিত থাকলেও তিনি নিয়মিত বেতন তুলছেন। ডেপুটেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তিনি ফেরেননি মূল স্কুলে।

জানা গেছে, ডেপুটেশনের প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদের মধ্যে টানা ৮ মাস ৮ দিন পলি চৌধুরী কোন্ স্কুলে দায়িত্ব পালন করেছেন, তার কোনো কাগজপত্র বা অনুমোদন সংশ্লিষ্ট জেলা ও থানার শিক্ষা অফিসে নেই। এ সময়কাল পুরোপুরি প্রশাসনিক শূন্যতার মধ্যে গেছে। বিষয়টি শুধু অনিয়মের নয়, একই সঙ্গে সরকারি নীতিমালা ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা উপেক্ষা করারও নজির তৈরি করেছে।

২০১৯ সালে চান্দগাঁও এলাকার হাছান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন পলি চৌধুরী। তিন বছরের মাথায় ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি তিনি ডেপুটেশনে যান পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে। প্রথম দফার মেয়াদ ছিল এক বছর, শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এরপর দ্বিতীয় দফার ডেপুটেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। কিন্তু সেটি কার্যকর হয় ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর। ফলে মাঝের সময়টায় কোনো অনুমোদন ছাড়াই দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

তথ্যমতে, দ্বিতীয় দফার মেয়াদও শেষ হয়েছে ২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। অথচ এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্তও তিনি হাছান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেননি।

হাছান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী প্রায় সাড়ে ৫০০ জন। শিক্ষক ছিলেন ১০ জন, এর মধ্যে একজন সম্প্রতি বদলি হয়েছেন। পলি চৌধুরী ফেরত না আসায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর চাপ বহুগুণে বেড়েছে। অপরদিকে মাত্র ২২৭ শিক্ষার্থী ও পাঁচজন শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে তাকে রেখে দেওয়া হয়েছে।

এর চেয়েও বড় প্রশ্ন—প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি একটি অফিস আদেশ জারি করে। জুলাই বিপ্লবের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলে এই নির্দেশনা আরও জোরালো করা হয়। আদেশে স্পষ্টভাবে বলা হয়, সকল শিক্ষককে সংযুক্তি বা ডেপুটেশন বাতিল করে ৯ জানুয়ারির মধ্যে মূল কর্মস্থলে ফেরত যেতে হবে। কিন্তু সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পলি চৌধুরী এখনো অন্য স্কুলেই রয়েছেন।

চান্দগাঁও থানা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল হাসান বলেন, ‘৯ সেপ্টেম্বর ডেপুটেশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে, নতুন অনুমোদন হয়নি। মাঝখানের অনুমোদনহীন সময় নিয়েও আমরা প্রশ্ন তুলেছি।’ তিনি জানান, শিক্ষিকার কাছ থেকে কৈফিয়ত তলব করা হবে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমানও স্বীকার করেছেন বিষয়টি। তবে তিনি জানান, আসন্ন বৃত্তি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে মৌখিক নির্দেশে এখনো তাকে পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, কোন্ বিধি অনুযায়ী অনুমোদন ছাড়াই একজন শিক্ষককে রাখা হচ্ছে?

এদিকে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পলি চৌধুরী দাবি করেছেন, ডেপুটেশনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছেন তিনি। এমনকি আট মাস আট দিনের অনুমোদনও নাকি নিয়েছেন। কিন্তু জেলা ও থানা শিক্ষা অফিস কোনো কাগজপত্রের অস্তিত্বই স্বীকার করছে না।

শিক্ষক সংকটে ভুগতে থাকা হাছান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, একজন শিক্ষকের এভাবে অনুপস্থিতি শুধু শিক্ষার মানকেই ধ্বংস করছে না, সরকারি নীতিমালা ও আদেশকে তাচ্ছিল্য করার নজিরও তৈরি করছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm