কোটি টাকা খরচ, অথচ খাল ভরা আবর্জনা— জামায়াতের কাজ দেখে ক্ষুব্ধ চট্টগ্রামের মেয়র

খরচ এক কোটি না ৫০ লাখ?

চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাল ‘বির্জা খাল’ পরিষ্কারের নামে জামায়াতে ইসলামীর কাজ দেখে চটেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। খাল পরিষ্কারে জামায়াতের দাবি করা কোটি টাকার অংক নিয়েও তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

গত ১৯ এপ্রিল চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের অংশ হিসেবে বির্জা খাল খনন ও পরিস্কার কার্যক্রম শুরু করে জামায়াতে ইসলামী।
গত ১৯ এপ্রিল চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের অংশ হিসেবে বির্জা খাল খনন ও পরিস্কার কার্যক্রম শুরু করে জামায়াতে ইসলামী।

সোমবার (২ জুন) দুপুরে নগরীর বাকলিয়ায় খালটি পরিদর্শনে গিয়ে সিটি মেয়র দেখতে পান, খালের অনেক অংশ এখনও ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি।

মেয়র এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘চট্টগ্রামে ৫৭টি খালের মধ্যে বির্জা একটি গুরুত্বপূর্ণ খাল। জামায়াতে ইসলামী আমাদের কাছে এটি পরিস্কারের অনুমতি চেয়েছিল, আমরা তা দিয়েছিলাম। তারা জানিয়েছে, খাল পুরোপুরি পরিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু আজ এসে দেখি, প্রচুর ময়লা পড়ে আছে। এখন আমাদের আবারও এই খাল পরিষ্কার করতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের স্পেশাল টিম মঙ্গলবার থেকে আবার পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করবে।’

ঘটা করে কাজ শুরু

গত ১৯ এপ্রিল চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের অংশ হিসেবে বির্জা খাল খনন ও পরিস্কার কার্যক্রম শুরু করে জামায়াতে ইসলামী। সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন নিজেই। ওই আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরের আমির শাহজাহান চৌধুরী, সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম প্রমুখ।

‘সবার সহযোগিতায় বির্জা খাল পাবে প্রাণ’— স্লোগানে খাল পরিস্কার অভিযানে দুই শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেওয়ার কথা জানানো হয় জামায়াতের পক্ষ থেকে। তলদেশ থেকে মাটি কাটা এবং ময়লা-আবর্জনা সরাতে ব্যবহৃত হয় এস্কভেটরও।

খরচ এক কোটি না ৫০ লাখ?

জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন নিয়ে দলীয় বায়তুল মাল তহবিল থেকে এক কোটি টাকা ব্যয়ে খালটি পরিষ্কার ও খনন করা হয়েছে।

পরিস্কার কাজের শুরুতেই চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুরো প্রকল্পে এক কোটি টাকার বেশি ব্যয় হচ্ছে।’

তবে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের বাজেট অনুযায়ী এই খাল পরিষ্কারে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। কিন্তু জামায়াত জানিয়েছে, তারা এক কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ করেছে। আমি বলবো, এতে ৫০ লাখ টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা নয়।’

জামায়াতের দাবি ও বাস্তবতা

১৯ এপ্রিল খাল খননের কাজ শুরু করার সময় জামায়াত নেতারা বলেছিলেন, সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। কিন্তু দেড় মাস পার হওয়ার পরও খালের বড় একটি অংশ ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি থেকে যায়। এর মধ্যেই পরে সিটি কর্পোরেশনকে জানানো হয়, কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, জামায়াতের পক্ষ থেকে সিটি কর্পোরেশনকে কিছুদিন আগে জানানো হয়, বির্জা খাল পরিস্কার ও খনন কর্মসূচি পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। মূলত এরপরই বির্জা খাল দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সিটি মেয়র।

এই ঘোষণার পরই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বির্জা খাল সরেজমিন দেখতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি খালের বর্তমান অবস্থা দেখে হতাশা প্রকাশ করেন।

‘কাজ তো এখনও চলছে’—পাল্টা যুক্তি

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির শাহজাহান চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ব্যস্ত আছেন বলে জানান।

খাল পরিস্কার কাজের দেড় মাস পরে সোমবার (২ জুন) রাতে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের কাজ তো এখনও শেষ হয়নি। কাজ এখনও চলতেছে, সামনেও চলবে।’

তাহলে এতো সব ময়লা-আবর্জনা থেকে গেল কীভাবে— এমন প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘বৃষ্টির পানিতে এসব ময়লা ভেসে আসছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm