পুলিশ শুরুতে নাম জানাতে অনীহা প্রকাশ করলেও শেষ পর্যন্ত কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ইউনিফর্ম তৈরির জন্য কাপড় সরবরাহের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখালো আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক সাংসদ ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের ছোট ভাই তারিকুল ইসলামকে। তিনি ওয়েল ফেব্রিক্স এন্ড ওয়েল কম্পোজিট নিট লিমিটেডের পরিচালক।
সোমবার (২ জুন) রাত ৯টার দিকে পার্বত্য চট্টগ্রামভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী কেএনএফের ইউনিফর্ম সন্দেহে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুচ ছালামের মালিকানাধীন ‘ওয়েল ফেব্রিক্স এন্ড ওয়েল কম্পোজিট নিট লিমিটেডের’ কারখানার রোলিং করা কাপড়সহ গাড়ি জব্দ করা হয়। এছাড়া এ ঘটনায় ছালামের ভাই তারিকুলসহ মোট চারজনকে কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ।
অভিযানে সাবেক এমপি ছালামের ছোট ভাই ছাড়াও গ্রেপ্তার অন্য তিনজন হলেন—প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম, জামালুল ইসলাম ও মো. আতিকুর রহমান।
ওয়েল কম্পোজিট নিট লিমিটেড ছালাম পরিবারের মালিকানাধীন ওয়েল গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। আবদুচ ছালাম চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এবং ওয়েল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নয় বছর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘কেএনএফের ইউনিফর্ম তৈরির জন্য কাপড় সরবরাহে এই কারখানার সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়ার পর অভিযান চালানো হয়েছে।’
পুলিশ বলছে, এসব ইউনিফর্ম কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর সদস্যদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল কি না, তা যাচাই-বাছাই চলছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদও চলছে।
এদিকে গত দুই সপ্তাহ ধরে তিন অভিযানে চট্টগ্রাম নগরী থেকে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ৪৬ হাজার পিস ইউনিফর্ম জব্দ করা হয়।
গত ১৭ মে রাতে চট্টগ্রাম নগরীর ‘রিংভো অ্যাপারেলস’ নামের ওই পোশাক কারখানায় নগর গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান চালিয়ে ২০ হাজার ৩০০ পিস ইউনিফর্ম জব্দ করে। অভিযানে কারখানার মালিক সাহেদুল ইসলামসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অপর দু’জন হলেন—গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। পুলিশ জানিয়েছে, তারা দু’জনই এই ইউনিফর্ম তৈরির অর্ডার এনেছিলেন।
১৮ মে বায়েজিদ থানায় নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই ইকবাল হোসেন বাদি হয়ে চারজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত মার্চে গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার কেএনএফ সদস্য মংহ্লাসিন মারমা ওরফে ‘মং’-এর কাছ থেকে প্রায় দুই কোটি টাকার বিনিময়ে ইউনিফর্ম তৈরির এই চুক্তি নেন। কেএনএফ সদস্যরাই ইউনিফর্ম তৈরির কাপড় সরবরাহ করে, আর মে মাসে পোশাক হস্তান্তরের কথা ছিল।
দ্বিতীয় দফায় ৪৮ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার (২৭ মে) আরও ১১ হাজার ইউনিফর্ম উদ্ধার করেছে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট কারখানার মালিক সাহেদুল ইসলাম এবং অর্ডারদাতা গোলাম আজম ও নিয়াজ
গত ২৭ মে রাতে নগরীর পাহাড়তলী থানার ডিটি রোডে অবস্থিত ‘নুর ফ্যাশন অ্যান্ড গার্মেন্টস’ থেকে আরও ১৫ হাজার ইউনিফর্ম জব্দ করেছে বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশ। এ ঘটনায় একটি গার্মেন্টস কারখানার মালিক মতিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলায় উল্লেখ করা হয়, এসব পোশাক কেএনএফ-এর ইউনিফর্ম এবং এগুলো ৫০ লাখ টাকার চুক্তিতে এক ব্যক্তি, যার নাম মং হ্লা সিন মারমা তৈরি করিয়েছেন। রোববার (১ জুন) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইব্রাহিম খলিল তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ৩১ মে ‘রিংভো অ্যাপারেলস’ নামে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক সৈয়দা সালেহা পারভীনকে ৬ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। পুলিশের করা ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন শুনানি শেষে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইব্রাহিম খলিল ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আরএ/জেজে/ডিজে