ঘনিষ্ঠতার আড়ালে ৮০ কোটির কারসাজিতে এস আলম–রেস্তোরাঁ মালিক, দুদকের মামলা

ক্ষমতা খাটিয়ে ব্যাংকের বিপুল টাকা মেরে দেওয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সাইফুল আলম মাসুদ এবং চট্টগ্রাম নগরের লা-এরিস্টোক্রেসি রেস্তোরাঁর মালিক নাজমে নওরোজসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। নাজমে নওরোজের সঙ্গে সাইফুল আলম মাসুদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

ঘনিষ্ঠতার আড়ালে ৮০ কোটির কারসাজিতে এস আলম–রেস্তোরাঁ মালিক, দুদকের মামলা 1

অভিযোগে বলা হয়েছে, তারা ২০২০ ও ২০২১ সালে ব্যাংক থেকে ৭৯ কোটি ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯ শত টাকা উত্তোলন করে তা পরিশোধ না করে বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যক্তির মাধ্যমে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অর্থ লোপাট করেছেন। খোদ এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের পকেটে ঢুকেছে।

রোববার (১৭ আগস্ট) চট্টগ্রাম কার্যালয়-১ থেকে দায়ের করা হয়। এটি দায়ের করেছেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আফরোজা হক খান।

মামলায় দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪০৯, ৪২০, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯; দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২); এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারায় মামলা করা হয়েছে।

এজাহারে বলা হয়েছে, লা-এরিস্টোক্রেসি রেস্তোরাঁর ঋণসীমা মাত্র ২ কোটি টাকা থাকা সত্ত্বেও নাজমে নওরোজ ৭০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন।

এছাড়া আসকার দীঘির পাড়ের মহিলা শাখা থেকে সুদসহ ১১৭ কোটি টাকা, প্রবর্তক মোড় শাখা থেকে ৯০.৪৫ কোটি টাকা এবং চকবাজার শাখা থেকে ২৭ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, এই টাকার একটি বড় অংশ এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের পকেটে ঢুকেছে।

মূল অভিযুক্ত যারা

চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ (এস আলম) ও রেস্টুরেন্ট মালিক নাজমে নওরোজ ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন— এস আলমের ব্যক্তিগত সচিব ও ইসলামী ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আকিজ উদ্দীন (৪৪), লা-এরিস্টোক্রেসি রেস্টুরেন্টের স্বত্ত্বাধিকারী নাজমে নওরোজ (৫০), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মোঃ আলী (৭৩), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক সৈয়দা নাজমা মালেকা (৫১) ও হুমায়রা সাঈদা খানম (৭২), জেডআরজে সার্চ এন্ড পরিদর্শক কোম্পানির স্বত্ত্বাধিকারী শফিকুল করিম, মিশকাত ট্রেড সেন্টারের স্বত্ত্বাধিকারী মিশকাত আহমেদ (৪১), রাবার সাপ্লাইয়ার আরিফ হাসনাইন (৪৩), নূর ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ জসিম উদ্দিন (৫২), মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ জুয়েল মিয়া (৪০), রিমঝিম শাড়ি হাউজের স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ জুয়েল মিয়া (৪৬), আগমন এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ এরসাদ সিকদার (৪৩), এমএইচ এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ মনিরুল হক (৪৬), নিউ বসুন্ধরা জুয়েলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী যিশু বণিক (৫৯), মেসার্স আল মদিনা স্টিলের স্বত্ত্বাধিকারী আলমগীর (৪৪), হক মেরিন ফিশের স্বত্ত্বাধিকারী মাহবুবুল হক (৪১), দামপাড়া মুুন্সি মিয়া বাড়ির মোহাম্মদ শাহ আলম (৬৮), বায়েজিদ বোস্তামী মীরপাড়ার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (৫৯) এবং আসকারদিঘি পাড়ের জাফর আহমেদের ছেলে মোহাম্মদ ইকবাল ফারুক (৪৮)।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, নওরোজ এন্টারপ্রাইজের চটপটির দোকান ও দুটি রেস্তোরাঁর নামে ২৩৪ কোটি টাকা ঋণ প্রদানে নিয়মবহির্ভূত কার্যকলাপ হয়েছে।

দুদক ইতোমধ্যেই ব্যাংক কর্মকর্তা ও নাজমে নওরোজের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করেছে। মামলায় ২০ জনকে দণ্ডবিধি, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের বিভিন্ন ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।

নাজমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল মাসুদের

নাজমে নওরোজ ২০০৮ সালে লা-এরিস্টোক্রেসি রেস্টুরেন্ট চালু করেন এবং ২০১১ সালে আল-ওয়াদিয়াহ চলতি হিসাব খোলেন। তার ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন এবং প্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয়ের জন্য একই বছরে ঋণের আবেদন করেন। ব্যাংকের ক্রেডিট কমিটি এবং পরিচালনা পর্ষদ পর্যায়ক্রমে ২ কোটি টাকার বাই-মুরাবাহা (ইএমআই) ঋণ অনুমোদন করেন। পরবর্তীতে ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময় অতিরিক্ত ঋণ অনুমোদিত হয়, যার মধ্যে বাই-মুরাবাহা, হাইপো এবং এইচপিএসএম প্রকৃতির ঋণ ৭৯ কোটি ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯৮৪ টাকা পর্যন্ত পৌঁছায়।

অভিযোগ অনুসারে, নাজমে নওরোজ এই ঋণ অনুমোদনের সীমা অতিক্রম করে ২০১৫ সাল থেকে ঋণ ব্যবহার করে নগদ ও বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে টাকা স্থানান্তর ও আত্মসাত করেছেন। এছাড়া ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তাও সীমা অতিক্রমের বিষয় জানতেন, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নাজমে নওরোজের সঙ্গে ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী ও দুই শাখা ম্যানেজার হুমায়রা সাঈদা খানম ও সৈয়দা নাজমা মালেকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্কের সুযোগে ঋণ হিসাবের মাধ্যমে শত কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে স্থানান্তর করা হয়, যা মানিলন্ডারিং হিসেবে প্রতীয়মান হয়।

জেজে/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm