চট্টগ্রামের শিপইয়ার্ডে ছয় মাসে পঙ্গু ১১ শ্রমিক, রাতে নেই জরুরি চিকিৎসাব্যবস্থা

১০ বছরে ১২৯ জনের মৃত্যু

জাহাজ ভাঙা শিল্পে কাজ করতে এসে কর্মক্ষম মানুষ পঙ্গু হয়ে বাড়ি ফিরছেন। চট্টগ্রামে গত ১০ বছরে শিপইয়ার্ডে ১২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত ছয় মাসে ৩২টি দুর্ঘটনা হয়েছে, মারা গেছেন ৩ জন শ্রমিক। ১১ শ্রমিকের কাটতে হয়েছে হাত কিংবা আঙুল।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিপইয়ার্ডে ৩২টি দুর্ঘটনায় সাতজন মারা যান। আহত হন ৩৭ জন। ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে মৃত্যু হয়েছে ১২৯ জনের।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ছয় মাসে ৩২টি দুর্ঘটনায় ৪২ জন শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন ১৮ জন এবং হালকা আহত হয়েছেন ২১ জন। আহতদের মধ্যে ১১ জন শ্রমিকের হাত কিংবা আঙুল কেটে ফেলতে হয়েছে অথবা থেঁতলে গেছে। ১৩ জনের পা বা পায়ের হাড় ভেঙেছে কিংবা দগ্ধ হয়েছেন। ১০ জন মাথায় এবং ৪ জন শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছেন।

দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৩টি ভারী লোহার আঘাতে, বিস্ফোরণে আগুনে দগ্ধ হওয়ার ঘটনা ১০টি, ভারী যন্ত্রপাতির আঘাত সংক্রান্ত ৬টি এবং জাহাজের উঁচু থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ৩টি। এসব দুর্ঘটনার ৭৫ শতাংশ দিনে এবং ২৫ শতাংশ রাতে ঘটেছে। নিহত তিনজনের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে রাতে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দিনে কাজের চাপ বেশি থাকায় দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি। আর রাতে তদারকি ও জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় ঝুঁকি বেশি।

বিলস’র তথ্যমতে, ২০২৪ সালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিপইয়ার্ডে ৩২টি দুর্ঘটনায় সাতজন মারা গেছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ৩৭ জন। এসব দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি হতাহত হন জাহাজ কাটায় নিয়োজিত শ্রমিকরা। নিহতদের সবাই জাহাজ কাটার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

বিলসের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক তথ্যকেন্দ্রের সমন্বয়ক ফজলুল কবির মিন্টু জানান, জাহাজ ভাঙা শিল্পে দুর্ঘটনার পেছনে মূলত পাঁচটি বিষয় রয়েছে। প্রথমত, শ্রমিকরা স্থায়ীভাবে চাকরি না পাওয়া। দ্বিতীয়ত, এক ঘণ্টা পর পর ১৫ মিনিটের বিশ্রাম না দেওয়া। তৃতীয়ত, নির্দিষ্ট সময়সীমার আগে শ্রমিকদের লোভ দেখিয়ে জাহাজ কাটতে বাধ্য করা। চতুর্থত, ইয়ার্ডগুলোতে যোগ্য সেফটি অফিসার না রাখা এবং সর্বশেষ কারণ হলো, প্রয়োজন অনুযায়ী পরামর্শদাতার নিয়োগ না দেওয়া।

মালিকপক্ষের সাময়িক লাভের মানসিকতা এ ধরনের দুর্ঘটনার বড় কারণ উল্লেখ করে তিনি জানান, বর্তমানে চারটি ইয়ার্ড গ্রিন সার্টিফাইড হয়েছে। নতুন বছরে আরও ১২ থেকে ১৪টি গ্রিন সার্টিফাইড হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু অবকাঠামোগত কমপ্লায়েন্স মেনটেইন করার পাশাপাশি তারা যদি সোশাল কমপ্লায়েন্স মেনটেইন করার কথা ভাবে, তাহলে দুর্ঘটনা কমে যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর শ্রমিকদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অর্থোপেডিকস ওয়ার্ড ও ৩৬ নম্বর বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের অঙ্গহানি হয় অনেকের।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অর্থোপেডিকস সার্জারি ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান ডা. মিজানুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আঘাতের ধরন দেখেই চিকিৎসা প্রণালী নির্ধারণ করা হয়। অনেক সময় শরীরের ক্ষতের পাশাপাশি ব্রেন ইনজুরি হয়ে থাকে। অনেকে দগ্ধ হন। তবে রোগী যে ওয়ার্ডেই থাকুক, আমরা সমন্বিত চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করি।

আইএমই/ডিজে

ksrm