চট্টগ্রামে ‘চাঁদাবাজি’র সময় ধরা জাতীয় নাগরিক কমিটির দুই সদস্য, পিটিয়ে পুলিশে দিলো জনতা

চট্টগ্রামে ফুটপাত থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে জাতীয় নাগরিক কমিটির দুই সদস্যকে পিটিয়ে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। তারা নিজেদের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে দিয়ে ফুটপাতের দোকানগুলো থেকে টাকা তুলছিল।

আটক দু’জন হলেন—নোয়াখালী জেলার কবিরহাট থানার নর সিংহপুর গ্রামের মৃত মফিজ উল্লাহর ছেলে আবদুল কাদের ইমন (২৩) এবং বাগেরহাট জেলার শরনখোলা থানার পশ্চিম রাজাপুর গ্রামের মাঝিরবাড়ির মৃত হেমায়েত মাঝির ছেলে আসাদুজ্জামান রাফি (২৬)। তারা দু’জনই জাতীয় নাগরিক কমিটি, ইপিজেড থানার সদস্য।

মঙ্গলবার (১৮মার্চ) মধ্যরাতে নগরীর ইপিজেডের বন্দরটিলা সিটি করপোরেশন মার্কেটের সামনে থেকে তাদের আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়। পরে মো. আজিম নামে এক ব্যবসায়ী বাদি হয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে ইপিজেড থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মো. আজিম এবং তার সঙ্গীয় মো. রিপন আলী সিইপিজেড এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভ্যানগাড়িতে করে ব্যবসা করেন। ৫ আগস্টের পর ইমন ও রাফি নিজেদের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ‘ফুটপাতে ব্যবসা করতে হলে’ তাদের চাঁদা দিতে হবে বলে জানান। ব্যবসায়ীরা নিরুপায় হয়ে বেশ কিছুদিন ধরে তাদের চাঁদা দিয়ে আসছেন। গতকাল সকাল ১০টার দিকে ইমন চাঁদার টাকা নিতে সিইপিজেড মোড়ে যান। তখন টাকা না থাকায় ব্যবসায়ীরা টাকা দিতে পারেননি। রাত ১২টার দিকে ব্যবসায়ী আজিজের মুঠোফোনে কল দিয়ে টাকা না দেওয়ার কারণ জানতে চায় রাফি। এসময় তাদের চাঁদা না দিলে ব্যবসা করতে পারবেনা বলে হুমকি দেয়। পরে আজিম ও রিপনকে বন্দরটিলা সিটি করপোরেশন মার্কেটের সামনে দেখা করতে ডাকেন রাফি। সেখানে পৌঁছা মাত্রই রিপনের কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করে রাফি ও ইমন। তাৎক্ষণিক ২ হাজার টাকা দিতে চাইলে তারা রিপনকে গালাগাল করতে থাকে। একপর্যায়ে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে অজ্ঞাত ৩-৪ জন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এসময় ইমন ও রাফিকে আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী রিপন মিয়া বলেন, ‘৫ আগস্টের পর একদিন আবদুল কাদের ইমন এবং আসাদুজ্জামান রাফি আমাদের কাছে এসে বলে তারা বন্দর-পতেঙ্গার বড় সমন্বয়ক। তাদের ওপর আর কেউ নেই। ফুটপাতে ব্যবসা করতে হলে তাদের চাঁদা দিতে হবে। পুলিশও তাদের ওপর কোনো কথা বলতে পারবে না। তাহলে তাদেরকে ট্রন্সফার করে দেওয়া হবে। পরে একপ্রকার বাধ্য হয়ে প্রতি সপ্তাহে তাদের ২-৩ হাজার টাকা দিতাম। এখন তাদের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। গত রাতে এসে ঈদের আগে ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানান। এতো টাকা দিতে পারবো না জানালে আমাদের ওপর চড়াও হয় তারা। একপর্যায়ে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাদের আটক করে। পরে পুলিশ এসে তাদেরকে থানায় নিয়ে যায়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজিতে ইমন ও রাফির সঙ্গে শিহাব নামের আরও এক যুবক জড়িত। তিনিও এই এলাকার সমন্বয়ক পরিচয় দেন। তারা তিনজন আড্ডা থেকে চাঁদাবাজি একসঙ্গেই করেন। ইমন, রাফি গ্রেপ্তার হলেও এখনও অধরা থেকে গেছে তাদের আরেক সহযোগী শিহাব।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া মো. শিহাব। তিনি বলেন, ‘আসাদুজ্জামান রাফি আমাদের জুনিয়র। আব্দুল কাদের ইমন একসময় আমাদের সহযোদ্ধা ছিলেন। সে হিসেবে তার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছিল। তার চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের খবর আমাদের কানে আসলে নিজে থেকে আমি এবং আতিকুর রহমান রাফি আলাদা হয়ে যায়। পরে ইমন ও আসাদুজ্জামান রাফি এখানকার ‘জতীয় নাগরিক কমিটি’র সদস্য হয়। আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকি।’

বিষয়টি জানতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক আরিফ মঈনুদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ইতোপূর্বে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, এখন কোনো সমন্বয়ক নেই। এটি আন্দোলনের একটি প্লাটফর্ম ছিল। গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। ইমন ও রাফি চাঁদাবাজি করতে গিয়ে আটক হয়েছে। তারা ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’র সদস্য। তাদেরকে নগরিক কমিটির লোকজনই ধরিয়ে দিয়েছে। চাঁদাবাজ নাগরিক কমিটির হোক বা অন্যকারও—এদের একটাই পরিচয়, তারা চাঁদাবাজ।’

এর আগেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক আরিফ মঈনুদ্দিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এখন নির্বাহী কমিটি রয়েছে। সমন্বয়ক কোনো পদ আর নেই।

ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ফুটপাতে চাঁদাবাজি করতে গেলে আব্দুল কাদের ইমন ও আসাদুজ্জামান রাফি নামের দু’জনকে ধরে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তারা দু’জন জাতীয় নাগরিক কমিটির ইপিজেড থানা কমিটির সদস্য বলে আমাদের জানিয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।’

তাদের ছাড়াতে রাতে থানায় কারা গিয়েছিল—জানতে চাইলে ওসি জানান, ‘তাদের খোঁজখবর নিতে রাতে ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’র কয়েকজন থানায় এসেছিল। এসময় তাদের নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।

এনইউএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm