চট্টগ্রাম কাস্টমসে ‘হাফ অটোমেশন, হাফ ম্যানুয়ালে’ ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি

তিন গ্রুপ মিলে একজন কম্পিউটার অপারেটর, নেই প্রিন্টার

‘চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কিছু কাজ হাতে লিখে আর কিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ম্যানুয়াল হলে শিটটা লিখে তিনজন লিখে স্বাক্ষর করবেন। তিন গ্রুপ মিলে একটি কম্পিউটার অপারেটর, সেখানে প্রিন্টার নেই। পেনড্রাইভে করে নিয়ে আরেক জায়গা থেকে প্রিন্ট করতে হচ্ছে। এতো কষ্ট চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে। আল্লাহর ওয়াস্তে হয় অটোমেশন করেন, না হলে ম্যানুয়ালে ব্যাক করে দেন। আমরা বাঁচি।’

এভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ–সভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী।

শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এমসিসিআইয়ের কার্যালয়ে এনবিআর সংস্কার বিষয়ক এক রাউন্ড টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও এনবিআর সংস্কার কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ (পিইবি) বৈঠকের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবীর। বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।

দুই যুগেও এগোয়নি অটোমেশন

বৈঠকে এএম মাহবুব চৌধুরী আরও বলেন, আমরা বারবার বলছি, হয় পুরোপুরি অটোমেশন করুন, না হলে ম্যানুয়াল করুন। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে দিনের অর্ধেক চলে যায়। কাস্টমসে থাকা কর্মীকে ফোন দিলে সে বলে দীর্ঘ লাইনের কথা। ও বসে আছে, কাজ এগোবে কীভাবে। কারণ যেহেতু অটোমেশন। দুই যুগে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অটোমেশন ‘এক ইঞ্চিও এগোয়নি’।

বৈঠকে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, যদি অটোমেশন হয়, সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। অটোমেশন শুধু এনবিআরের হলে হবে না। এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেরও হতে হবে। আমাদের এক আমদানিকারক পণ্য রিলিজ করতে গেল তখন শুল্ক গোয়েন্দা তা আটকে দিল। নানা কাহিনী করল। এরপর তাকে দীর্ঘদিন পরে এই পণ্য কীভাবে যাবে (খালাস হবে) সেটা নিয়ে শুনানি হল। শুনানিতে শুল্ক দিয়ে পণ্য নেওয়ার নির্দেশ দিল। এগুলো করতে করতে ৪-৫ মাস হয়ে গেছে। তখন গেছে পোর্ট ড্যামারেজ মাফ করানোর জন্য। শিপিং উপদেষ্টা আদেশ দিলেন, এই ড্যামারেজ ৫০ শতাংশ মাফ করার জন্য। এই আদেশ চট্টগ্রাম পোর্টে যেতে লাগছে ২১ দিন। আমার ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটেছে।

এনবিআরের অনেক অফিসে ‘ধর্ণা’

অন্যদের মধ্যে এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস লিমিটেড পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, এক অফিসে কর, ভ্যাট নেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। তাতে সরকারের ব্যয় সংকোচন হবে। রাজস্ব আদায় ও সহজ হবে। ব্যবসায়ীদের রাজস্ব দিতে অনেকগুলো অফিসে ধর্ণা দিতে হয়। এখন গোয়েন্দা সংস্থাও অনেকগুলো। আয়কর গোয়েন্দা আছে, আবার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলও (সিআইসি) আছে। আবার ভ্যাট অফিসে ভ্যাট গোয়েন্দা আছে। শুল্ক গোয়েন্দা আছে। একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কতগুলো এনবিআরের অফিসে ‘ধর্ণা’ দেবে?

তৈরি হয়েছে ‘দুষ্টচক্র’

এমসিসিআই সভাপতি কামরান তানভীরুর রহমান বলেন, আমাদের করভিত্তি দীর্ঘদিন ধরেই সীমিত রয়ে গেছে—দেশের ৩ শতাংশেরও কম নাগরিক আয়কর রিটার্ন জমা দেন। কর্পোরেট কর ফাঁকি ব্যাপকভাবে প্রচলিত। প্রয়োগ ব্যবস্থা দুর্বল, যা প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গুরুতর বিষয় হলো, আমাদের কর সংগ্রহ ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল, যেখানে রয়েছে ব্যাপক প্রশাসনিক স্বাধীনতা, যা একদিকে করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে, অন্যদিকে দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করে। এর ফলে তৈরি হয়েছে এক দুষ্টচক্র—কমপ্লায়েন্স কম, আস্থা কম এবং রাজস্ব কম।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm