চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ঘিরে গোপন চুক্তি ও ভাড়া বাণিজ্য, দখলদারদের সঙ্গে লেনদেন না করার আহ্বান

দখলের পর কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব একটি সুযোগসন্ধানী চক্রের দখলে রয়েছে। মব সৃষ্টির মাধ্যমে সহিংসভাবে দখল নেওয়ার পর তারা ক্লাবের সম্পদ ও নিয়মিত আয় থেকে বিপুল অংকের অর্থ আত্মসাৎ করছে বলে অভিযোগ তুলেছে প্রেসক্লাবের নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি।

YouTube video

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রায় এক বছর ধরে সদস্যরা দখলদারদের বর্জন করে ক্লাবে যাতায়াত বন্ধ রেখেছেন। তবে সরকার ও প্রশাসন পরিস্থিতি সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ চট্টগ্রামে সুশৃঙ্খল রাজনীতি, প্রশাসন, সমাজ ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

গত বছরের ৩ নভেম্বর চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের নেতৃত্বে গঠিত কথিত ও অবৈধ অন্তর্বর্তী কমিটি গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে বিপুলসংখ্যক অপসাংবাদিককে অবৈধভাবে সদস্যপদ প্রদান করেছে। একইভাবে অবৈধ উপায়ে স্থায়ী সদস্যদের অনেককে বহিস্কারের মতো স্পর্ধাও দেখিয়েছে। এসব অপকর্ম ডিসি এবং কথিত অন্তর্বর্তী কমিটির কথিত সদস্য সচিবের স্বাক্ষরেই হয়েছে। এ নিয়ে গুরুতর অভিযোগ ওঠার পর ডিসি ফরিদা খানম গত ৩১ জুলাই নিজে থেকে পদ ছাড়েন।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটির দাবি, প্রেসক্লাব নিয়ে ডিসির সব ধরনের হস্তক্ষেপ ছিল আইনবহির্ভূত, কারণ প্রেসক্লাব কোনো সরকারি অনুদাননির্ভর প্রতিষ্ঠান নয়; এটি সাংবাদিকদের মালিকানাধীন বেসরকারি ক্লাব। দেশের কোনো আদালতের নির্দেশ ছাড়া এ ক্লাবের কর্মকাণ্ড নিয়ে কারও হস্তক্ষেপের অবকাশ নেই।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ডিসির পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তী কমিটির অবশিষ্ট অংশ ক্লাবের জায়গা ভাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে, যা গ্রহণযোগ্য ও আইনসম্মত নয়। এতে যুক্ত না হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানানো হয়েছে নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে। তারা বলেন, যদি কেউ এসবের সঙ্গে জড়ান, তাহলে ভবিষ্যতে এর দায়দায়িত্ব তাদেরকেই বহন করতে হবে।

একই সঙ্গে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের দায়িত্ব নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটির হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

রংপুর প্রেসক্লাবে অবৈধ সদস্য অন্তর্ভুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা

রংপুর সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালত প্রশাসকের মাধ্যমে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছেন। ২৬ আগস্ট বিচারক ফারহানা খান এ আদেশ দেন। জানা যায়, কিছু বিতর্কিত ব্যক্তি সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে অবৈধভাবে প্রশাসক নিয়োগ করায় প্রেসক্লাব কমিটি আদালতে রিট করে। আদালত প্রথমে নিষেধাজ্ঞা দেন এবং আপিলেও তা বহাল থাকে। স্থানীয় সাংবাদিকরা দ্রুত নির্বাচিত কমিটির হাতে ক্লাবের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের অনির্বাচিত কমিটি বাতিল, নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশ

এর আগে গত ১৯ আগস্ট হাইকোর্ট ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের অনির্বাচিত কমিটি বাতিল করে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রেসক্লাব সদস্য এম এ মোতালেবের দায়ের করা রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। উল্লেখ্য, কোনো নির্বাচন ছাড়াই গত ৫ জানুয়ারি ওই কমিটি দায়িত্ব নেয়।

আন্তর্জাতিক প্রেস ফ্রিডম রিপোর্টে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব দখল নিয়ে উদ্বেগ

আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস (আইএফজে) তাদের দক্ষিণ এশিয়া প্রেস ফ্রিডম রিপোর্ট ২০২৪-২৫-এ বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ক্রমবর্ধমান সংকট নিয়ে একটি গভীর বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছে। ‘বাংলাদেশ: গণতন্ত্র পুনর্গঠন’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনে বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব জোরপূর্বক দখলে নেওয়ার সময় ২০ সাংবাদিকের ওপর নারকীয় হামলার ঘটনার ওপর। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের প্রাচীন এই আন্তর্জাতিক সংগঠনটি তাদের প্রতিবেদনে এসব ঘটনাকে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির অন্যতম প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্তরা অন্তত ৪ দফা– ৫, ৬, ১২ ও ১৪ আগস্ট হামলা চালিয়ে প্রেস ক্লাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। দেশীয় অস্ত্র, হাতুড়ি–শাবল নিয়ে ফটকের তালা ভেঙে তারা বার বার ক্লাবে প্রবেশ করে তাণ্ডব চালায়। এরপর পুরো ক্লাব দখল করে নেওয়া হয়।

আইএফজের প্রেস ফ্রিডম রিপোর্টে সর্বশেষ ঘটনার উল্লেখ করে বলা হয়, ‘২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত একটি দল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে হামলা চালায় এবং সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ করে, যাতে অন্তত ২০ জন আহত হন।’

আইএফজে তাদের প্রতিবেদনে এসব ঘটনাকে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির অন্যতম প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শুধুমাত্র ২০২৪ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়েই ৭ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ধামরাইয়ের সাংবাদিক স্বপন কুমার ভদ্রকে তার বাসার বাইরে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় এবং জুলাই মাসের বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ৪ সাংবাদিক প্রাণ হারান।

আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ফেডারেশন (আইএফজে) হলো বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোর বৃহত্তম গ্লোবাল ইউনিয়ন ফেডারেশন। এটি ১৪৬টি দেশের ১৮৭টি সংগঠনের মাধ্যমে ৬ লাখেরও বেশি গণমাধ্যমকর্মীর প্রতিনিধিত্ব করে। ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন আইএফজে বর্তমানে বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশে সক্রিয়, যা সাংবাদিকদের জন্য বৈশ্বিক কণ্ঠস্বরের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm