চট্টগ্রাম রেলে কাজ না পেয়ে দলবল নিয়ে ডিসিও দপ্তরে ঠিকাদার, কর্মকর্তা-কর্মচারী লাঞ্ছিত

মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় বাতিল দরপত্র

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামে প্রতারণার অভিযোগে দরপত্র হাতছাড়া হওয়ার পর দলবল নিয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার দপ্তরে ঢুকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন ঠিকাদার। এ সময় চট্টগ্রামের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার (ডিসিও) রুমে ঢুকে প্রতিবেদন প্রকাশ প্রতিবেদককেও গালিগালাজ করেন এবং তদন্ত কর্মকর্তাকে মারতে উদ্যত হন। পরে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুর ২টায় পাহাড়তলী বিভাগীয় বানিজ্য কর্মকর্তা তৌষিয়া আহম্মেদের দপ্তরে ঢুকে এমন আচরণ করেন ‘ভাই ভাই লন্ড্রি’র স্বত্বাধিকারী ওয়ালিউর রহমান।

বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা তৌষিয়া আহমেদ এবং আরএনবি কমান্ড্যান্ট শহীদ উল্লাহ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, ভাই ভাই লন্ড্রির স্বত্বাধিকারী ওয়ালিউর দলবল নিয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার দপ্তরে প্রবেশ করেন। এরপর তিনি সেখানে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেন। এ সময় দরপত্র যাচাই-বাছাই ও মাঠ পর্যায়ে তদন্ত কমিটির কর্মকর্তাদের দিকে তেড়ে যান।

এছাড়া এ ঘটনায় চট্টগ্রাম প্রতিদিনে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় প্রতিবেদককে উদ্দে্শ্য করে গালিগালাজ করতে থাকেন।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা তৌষিয়া আহম্মেদ বলেন, দলবল নিয়ে ওয়ালিউর রহমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করে। এছাড়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনে সংবাদ প্রকাশ করায় প্রতিবেদককে গালিগালাজ করতে থাকেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেল মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) সুবক্তাগীন বলেন, এই বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানা গেছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামে ট্রেনের প্রথম শ্রেণির কোচের স্লিপিং কেবিনের চাদর, বেড ধোলাই ও ইস্ত্রির (আয়রন) কাজের দরপত্র পাওয়ার পর ধরা পড়ে দরদাতা ‘ভাই ভাই লন্ড্রি’র স্বত্বাধিকারী ওয়ালিউর রহমানের প্রতারণা। রেলের জায়গা ‘দখলে নিয়ে’ গড়ে ওঠা একটি ওয়াশিং সেন্টারের ঠিকানা ব্যবহার করে ৫৯ লাখ টাকায় দরপত্রটি পান দরদাতা। তার এমন প্রতারণা রেল কর্মকর্তাদের হাতে ধরা পড়লে ৬৩ লাখ টাকার দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেওয়া সুপারিশ করে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি।

গত ১৭ মে চট্টগ্রামের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা তৌষিয়া আহমেদ তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা ‘মেসার্স মদিনা শালকর’কে কাজ দেওয়ার সুপারিশ করেন। এর আগে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজটি পান ‘ভাই ভাই লন্ড্রি’। পরে তাদের ওই দরপত্র বাতিল হয়।

এর আগে গত ২৪ এপ্রিল ‘ভাই ভাই লন্ড্রি’ ৫৯ লাখ টাকায় সর্বনিম্ন দরদাতা হন। কিন্তু তারা শর্ত না মেনে মিথ্যা তথ্য দেন। পরে রেলের কর্মকর্তাদের তদন্ত প্রতারণার বিষয়টি উঠে আসে। সর্বনিম্ন দরদাতা ‘ভাই ভাই লন্ড্রি’র কোনো নিজস্ব দোকান না থাকলেও তারা রেলের জায়গা ‘দখল করে’ গড়ে ওঠা ‘এসএম ওয়াশিং সেন্টার’র ঠিকানা ব্যবহার করে। এসএম ওয়াশিং সেন্টারটি আইস ফ্যাক্টরি রোডের মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের বিপরীতে অবস্থিত। তথ্য যাচাই করতে গিয়ে তাদের এমন প্রতারণা ধরা পড়ে রেলের মাঠ পর্যায়ের কমিটির হাতে।

পরে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা ‘মেসার্স মদিনা শালকর’র স্বত্বাধিকারী মোশাররফ হোসেনের যাবতীয় কাগজপত্র যাচাই করে তাদের ৬৩ লাখ টাকায় ধোলাইয়ের কাজ দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ৭০ লাখ টাকায় এতে তৃতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হয় ‘তাকবীর’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

এ নিয়ে দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনে ‘রেলের চাদর-কম্বল ধোলাইয়ে ‘ভাই ভাই লন্ড্রি’র অভিনব প্রতারণা, শেষমেশ বাতিল!’—শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

জেএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm