চাকসু ভোটে আলোচনায় সুন্নী মতাদর্শের ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’, ভোটযুদ্ধে নতুন হাওয়া

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) দীর্ঘ বিরতির পর অনুষ্ঠিতব্য কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে শেষ মুহূর্তের প্রচারণা জমে উঠেছে। ক্যাম্পাসজুড়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা, আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের আলোচনায় এখন সবচেয়ে আলোচিত নাম—সুফি মতাদর্শের ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’।

শান্তিপূর্ণ রাজনীতির ডাক দিয়ে গঠিত এই প্যানেলটি প্রচলিত ছাত্রসংগঠনের বাইরে অবস্থান করছে। তাদের দাবি, তারা কোনো দলীয় ব্যানারে নয়, বরং সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বের লক্ষ্যেই প্রার্থী হয়েছেন। ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরে সহিংস রাজনীতি, দখলদারিত্ব ও দলীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য ইতোমধ্যে ব্যাপক আলোচনায় এসেছে।

বিশ্লেষক ও শিক্ষার্থীদের অনেকে বলছেন, চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় সুন্নী মতাদর্শের সমর্থক বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে। ফলে এই মতাদর্শভিত্তিক প্যানেলটি চাকসু নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠতে পারে।

প্রচারণায় সরব অহিংস ঐক্য

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বর, বুদ্ধিজীবী চত্বর ও বিভিন্ন অনুষদ এলাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্যানেলের প্রার্থীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। ব্যানার-পোস্টার ছাড়াও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে সমর্থন চাইছেন তারা।

ভিপি (সভাপতি) পদপ্রার্থী মুহাম্মদ ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাকসু নির্বাচনে অংশ নিয়েছি সাধারণ শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর পৌঁছে দিতে। শেষ মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সবাই চায় একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।’

এজিএস (সহ-সাধারণ সম্পাদক) পদপ্রার্থী শহীদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, ‘সহিংসতা ও ভয়ভীতি ছাড়া শিক্ষার্থীরা যেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’

নির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী মুহাম্মদ সাব্বির রহমান বলেন, ‘আমরা অহিংস রাজনীতির পক্ষে কথা বলছি। আশা করি, শিক্ষার্থীরা আমাদের পাশে দাঁড়াবেন।’

১৬ দফা ইশতেহারে শিক্ষা, নিরাপত্তা ও জবাবদিহিতার প্রতিশ্রুতি

গত ৯ অক্টোবর অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য সহিংসতা-বিরোধী মূল্যবোধ ধারণ করে ১৬ দফা ইশতেহার ঘোষণা করে। এতে শিক্ষার্থীদের অধিকার, নিরাপত্তা ও জবাবদিহিতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ইশতেহারের মূল দফাগুলোর মধ্যে রয়েছে—চাকসু নির্বাচনকে নিয়মিত করতে একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করা, শিক্ষার্থী পরিচয়ে বৈষম্যমূলক নীতি বন্ধ, দলীয় দখলদারিত্ব ও সহিংস রাজনীতি রোধ, মানসম্মত শিক্ষা ও ইনসাফপূর্ণ ফলাফল নিশ্চিতে শিক্ষক মূল্যায়ন ব্যবস্থা, শাটল ট্রেনের সময়সূচি বৃদ্ধি, নতুন ছাত্র-ছাত্রী হল নির্মাণ ও আবাসন নিশ্চিতকরণ, ক্যাম্পাসের খাবারে রেটিং সিস্টেম চালু, নারীদের জন্য সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সার্টিফিকেট সংশোধনে ফি বাতিল, চাকসু ভবনে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন, নিরাপত্তা বুথ ও ওয়াই-ফাই জোন স্থাপন, বৃত্তি ও আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি, অ্যাম্বুলেন্স সেবা ও খেলার মাঠ সংস্কার, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় কাউন্সেলিং ব্যবস্থা।

প্যানেলটি নির্বাচিত হলে মাসিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রত্যেক প্রতিনিধির জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

পূর্ণাঙ্গ প্যানেল

গত ২১ সেপ্টেম্বর বুদ্ধিজীবী চত্বরে ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’ পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করা হয়। সম্পাদকীয় পদে রয়েছেন— খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক: খায়রুল আমীন হৃদয়, সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক: মুহাম্মদ ফয়সাল হোসেন, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক: মুহাম্মদ এহছানুল হক, সহ-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক: মুহাম্মদ ইমরান হোসেন, দপ্তর সম্পাদক: এস এম আলী হোসাইন জিসান, সহ-দপ্তর সম্পাদক: মুহাম্মদ ইব্রাহীম রুবেল, সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক: জাকিয়া সুলতানা, গবেষণা ও উদ্ভাবন সম্পাদক: মুরিদুল হাসান মুরাদ, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক: সৈয়দা সুরাইয়া হোসাইন, ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক: জান্নাতুন নাঈম খুকি, সহ-ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক: মিফতাহুল জান্নাত, স্বাস্থ্য সম্পাদক: মুহাম্মদ তারেক হাসান, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক: মুহাম্মদ জহির উদ্দীন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক: জুলহাসনাঈন সায়েম, যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক: ইসমাইল ফাহিম, সহ-যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক: মুহাম্মদ আল-মামুন, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক: মুহাম্মদ ইমাম হোসাইন, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক: মোহাইমিনুল কবির।

নির্বাহী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দৌলতুল ইসলাম সাকলাইন, তাউছিফুর রহমান, হানিফ ইসলাম, মুহাম্মদ সাইদুল ইসলাম ও মুহাম্মদ সাব্বির রহমান।

চবির শিক্ষার্থীদের অনেকেই বলছেন, এবার চাকসু নির্বাচনে অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য নতুন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা করতে পারে। সহিংস রাজনীতির প্রতি ক্লান্ত শিক্ষার্থীরা হয়তো এবার ভোট দেবেন ‘অহিংসতার’ পক্ষে।

ksrm