জাবেদের ড্রাইভারের ঘরে ২২ বস্তায় লুকানো ছিল ৮ দেশের সম্পদের ৫৮২ নথি

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর শিকলবাহা তালুকদার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে মামলার ২২ বস্তা আলামত উদ্ধার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এতে জাবেদের সম্পদের ৫৮২টি নথি পাওয়া গেছে। এসব নথিতে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই, সিঙ্গাপুর ছাড়াও ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও কম্বোডিয়াতেও তার সম্পদ অর্জনের তথ্য মিলেছে।

জাবেদের ড্রাইভারের ঘরে ২২ বস্তায় লুকানো ছিল ৮ দেশের সম্পদের ৫৮২ নথি 1

রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোরে দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ঢাকার উপ-পরিচালক মশিউর রহমানের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। দুদকের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

কর্ণফুলীর শিকলবাহা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ফকিরা মসজিদসংলগ্ন তালুকদার বাড়ির মোহাম্মদ ইলিয়াছ মদনের পাশের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় নথিপত্রগুলো। তার চাচাতো ভাই মো. ওসমানের ঘর থেকে দুদক ২২ বস্তা আলামত জব্দ করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ ইলিয়াছ মদন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্ত্রী রুখমিলা জামানের ব্যক্তিগত ড্রাইভার ছিলেন। প্রায় ১২ বছর ধরে তিনি এ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।

সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া আরামিট গ্রুপের দুই এজিএম—আব্দুল আজিজ ও উৎপল পালের জবানবন্দির ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। তারা জানায়, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত দেশ-বিদেশের সম্পদের নথিপত্র কঠোর গোপনীয়তায় ওই বাড়িতে রাখা হয়েছিল।

উৎপল পাল, যিনি দীর্ঘদিন জাবেদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে বিদেশে সম্পদ কেনাবেচা ও অর্থ পাচারের দায়িত্ব পালন করতেন, তার কাছ থেকে জব্দ হওয়া ল্যাপটপ ও মোবাইলে পাচারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। দুদকের দাবি, উৎপলই দুবাই হয়ে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের মাস্টারমাইন্ড। অন্যদিকে আব্দুল আজিজ আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়ামের এজিএম হিসেবে জাবেদের সম্পদ কেনা-বেচা ও রক্ষণাবেক্ষণে যুক্ত ছিলেন।

২৫ কোটি টাকার পাচারের মামলা

দুদক জানায়, ২০১৯–২০ সালে মন্ত্রী থাকার সময় জাবেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা আরামিটের কর্মকর্তাদের নামে পাঁচটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান খোলেন। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) থেকে ‘টাইম লোন’ সুবিধায় ২৫ কোটি টাকা নিয়ে সেটি বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেন। পরে সেই অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়।

এ ঘটনায় গত ২৪ জুলাই দুদকের উপপরিচালক মশিউর রহমান বাদী হয়ে জাবেদ, তার স্ত্রী, ভাই-বোন ও সহযোগীসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

বিদেশে পালিয়ে যাওয়া

সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ২০১৪–১৮ মেয়াদে ভূমি প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯–২৩ সাল পর্যন্ত ভূমিমন্ত্রী ছিলেন। তবে বিদেশে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগের পর ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে তাকে মন্ত্রিসভায় দেখা যায়নি। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকারের পতনের প্রাক্কালে তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে লন্ডনে পালিয়ে যান বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। বর্তমানে তিনি দুবাইয়ে থাকছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে তার ও স্ত্রী রুখমিলা জামানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারির আবেদন করে দুদক।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm