সিসিটিভিতে ধরা পুলিশ-মাদক কারবারির রহস্যময় লেনদেন, পতেঙ্গায় ভোররাতে কী ঘটেছিল?
নেভাল রোড যেন মাদকের মহাসড়ক
ভোররাত। চারদিক নিঃশব্দ। চট্টগ্রামের পতেঙ্গার নেভাল রোড তখন ঘুমিয়ে। কিন্তু এক কোণে হঠাৎ আলোয় ভেসে উঠছে ওয়াটার বাস টার্মিনালের সিসিটিভি ক্যামেরা। ঘড়ির কাঁটা তখন ঠিক ৪টা ২৫ মিনিটে। নির্জন সেই মুহূর্তেই ধরা পড়ে এক রহস্যজনক দৃশ্য। পুলিশের টহল গাড়িতে উঠে বসছেন একজন এএসআই, সঙ্গে আরও দুই পুলিশ সদস্য। কিন্তু এরপর যা দেখা যায়, তা যেন থ্রিলার সিনেমার চিত্রনাট্য!
হঠাৎ ছুটে আসে একটি মোটরসাইকেল। পেছনের সিট থেকে তুলে দেওয়া হয় একটি ‘অজানা প্যাকেট’। নেন, দেন, চলে যান—মিনিটখানেকেই শেষ লেনদেন। পুলিশের দাবি, ওটা ‘নাস্তার প্যাকেট’। কিন্তু স্থানীয়দের ভাষ্য ছাড়াও অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেটি ছিল মাদকের চালান। স্থানীয়রা বলছেন, পতেঙ্গায় পুলিশের টহল গাড়িতে করে এভাবে মাদক পাচারের ঘটনা নতুন কিছু নয়।
ভোররাতে রহস্যময় হাতবদল
ঘটনাটি ঘটে চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল, ভোররাত ৪টা ২৫ মিনিটে। ফুটেজে দেখা যায়, পতেঙ্গা মডেল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) তসলিম হুদা ‘কিলো-৫৩’ নামের একটি টহল গাড়িতে উঠছেন, সঙ্গে আছেন আরও দুই পুলিশ সদস্য। গাড়িতে তাদের সঙ্গী ছিল এলাকার কুখ্যাত মাদক-কারবারি নাগর আলী বাড়ির আলাউদ্দিন ও তার সহযোগী নুরুল হুদাসহ কয়েকজন। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক ও হত্যা মামলাসহ অন্তত ১৫টি অভিযোগ।
মাত্র ২০ সেকেন্ড পর সেখানে মোটরসাইকেলযোগে হাজির হয় ওই বাড়ির আরও দুই যুবক। নাম তাদের সিফাত ও তৌহিদুল ইসলাম টিশান। আলাউদ্দিন তাদের দেখে এগিয়ে যান পুলিশের গাড়ির দিকে। তারপরই টিশান মোটরসাইকেলের পেছনের সিট থেকে একটি প্যাকেট তুলে দেন এক পুলিশ সদস্যের হাতে। প্যাকেট নিয়েই সেই সদস্য দ্রুত গাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়েন, আর মোটরসাইকেল আরোহীরা মুহূর্তেই সটকে পড়েন।
স্থানীয়দের দাবি, পতেঙ্গা নেভালের এই পথে প্রায়ই ইয়াবা ও বিদেশি মদের চালান চলে আসে। তাই ফুটেজে দেখা প্যাকেটটি ঘিরে তৈরি হয়েছে গভীর সন্দেহ।
ফোন কাটলেন এসআই, মুখ খুললেন উপ-কমিশনার
ঘটনার বিষয়ে জানতে এএসআই তসলিম হুদার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা ব্যর্থ হয়। পতেঙ্গা থানার ডিউটি অফিসারের নম্বরে কল করা হলে ফোন ধরেন এসআই রুমেল। তিনি বলেন, ‘এএসআই তসলিম হুদার নম্বর চেয়েছেন? একটু স্যারকে জানিয়ে জেনে বলছি’ বলে লাইন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি আর সাড়া দেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। বিষয়টি বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার তদন্ত করছেন। আপনি উনার সাথে কথা বলুন।’
বন্দর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সোহেল পারভেজ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তাই মন্তব্যও নেই।’
তবে বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আমিরুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। এএসআই তসলিম হুদা ও সংশ্লিষ্ট ওসিকে ডাকা হয়েছিল। তারা বলেছেন, সিসিটিভি ফুটেজে কারও চেহারা স্পষ্ট নয়। আর ঘটনাটি মাদক সংশ্লিষ্ট কি না, তাও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’
সিপি