চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ার কল্পলোক আবাসিকের গাফফারের কলোনির সামনে পড়ে ছিল যুবকের রক্তাক্ত লাশ। শরীরে ছিল একাধিক গুলির চিহ্ন। পুলিশ লাশ উদ্ধারের দু’দিন পর পিস্তল ও গুলিসহ গ্রেপ্তার করে ‘খুনিকে’। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, পুরনো শত্রুতা ও মাদক ব্যবসার দ্বন্দ্বের জেরে খুনের এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার শুরু যেভাবে
২৫ জুলাই (শুক্রবার) বিকাল ৫টার দিকে স্থানীয় বাসিন্দারা কল্পলোক আবাসিকের গাফফারের কলোনির সামনে মো. মহিউদ্দিনের (৩৭) লাশ দেখতে পান। মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলির চিহ্ন ছিল। লাশের পাশেই ছড়িয়ে ছিল রক্তের ছাপ।
নিহত মহিউদ্দিন আনোয়ারা উপজেলার বরুমছড়া ইউনিয়নের মিছির বাপের বাড়ির মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে। তিনি বাকলিয়ার কালামিয়া বাজার মসজিদ গলিতে স্ত্রী ও পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন।
পরদিন (২৬ জুলাই) নিহতের ভাই বাকলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৪৪/২৫, ধারা ৩০২/৩৪)।
রাতের অভিযানে গ্রেপ্তার ‘খুনি’
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২৭ জুলাই রাতে রাহাত্তারপুল খালপাড় এলাকায় সিএমপির ডিবি উত্তর-দক্ষিণ বিভাগের একটি টিম অভিযান চালায়। সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মো. সুমন (১৯) নামে এক যুবককে।
সুমন কুমিল্লার মুরাদনগরের মো. জামালের ছেলে। তবে দীর্ঘদিন ধরে দৌলতখানের কলোনিতে ভাড়া থেকে বাকলিয়ার মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে।
গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে একটি মার্কিন তৈরি বিদেশি পিস্তল এবং তিন রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর আসামি মো. আসিফ (২৬) পালিয়ে যায়।
মাদক ব্যবসা নিয়ে আধিপত্যের জের
ডিবি পুলিশের দাবি, সুমন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন—তাদের মধ্যে পুরনো শত্রুতা ছিল। মাদক সাপ্লাই চেইন, খুচরা নিয়ন্ত্রণ ও নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা নিয়ে বিরোধ বাড়ছিল। মহিউদ্দিন আগে মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিলেও এলাকায় প্রভাব ছিল প্রবল।
সেই প্রভাবকে হুমকি মনে করেই আসিফ ও সুমন খুনের পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন মহিউদ্দিনকে একা পেয়ে তারা বিদেশি পিস্তল দিয়ে গুলি করে। এরপর লাশ টেনে নিয়ে যায় খালের পূর্ব পাশে আবু সওদাগরের কলোনির পেছনে। সেখানে ইটের স্তুপের নিচে লাশ চাপা দিয়ে তারা গা-ঢাকা দেয়।
কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান ও মাদকচক্র
তদন্তে উঠে আসছে, আসিফ-সুমনরা চট্টগ্রামের নতুন প্রজন্মের কিশোর অপরাধ চক্রের নেতা। এদের রয়েছে সুনির্দিষ্ট গ্যাং স্ট্রাকচার, অস্ত্র ব্যবহারে প্রশিক্ষণ এবং দ্রুত যোগাযোগের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ। এরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছে—বিশেষত বাকলিয়া, চকবাজার, কর্ণফুলী, পতেঙ্গা ও ডবলমুরিং অঞ্চলে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এসব গ্যাংয়ের পেছনে রয়েছে কিছু স্থানীয় প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া। এদের কেউ কেউ মাদকের টাকার ভাগ পায়, কেউ পায় ‘শান্তি বজায়’ রাখার দায়িত্বে থাকা ‘অঘোষিত সালিশদার’দের আনুকূল্য।
পুলিশের বক্তব্য
ডিবি জানায়, সুমনের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রটি KF 7.65 মডেলের। এটি স্থানীয় বাজারে পাওয়া যায় না, আন্তর্জাতিক অস্ত্রচক্রের মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করেছে বলে সন্দেহ।
ডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে মাদকের পুরো চেইন আছে। আমরা শুধু হত্যাকারী নয়, তাদের অস্ত্র সরবরাহকারী এবং আর্থিক মদতদাতাদের খুঁজে বের করতে কাজ করছি। তদন্তে আরও বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসবে।
জেজে/ডিজে