দুবাইয়ে পলাতক সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নামে ইস্যু করা ১১টি চেক ব্যবহার করে চারটি ব্যাংক থেকে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানাধীন কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকায় অবস্থিত আরামিট গ্রুপের কার্যালয় থেকে প্রতিষ্ঠানের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসাইন জানান, গ্রেপ্তারের সময় জাহাঙ্গীর আলমের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় জাবেদের সই করা আসল চেকের মূড়ি ও প্রমাণপত্র। অভিযোগ হলো, মালিকের অনুপস্থিতি ও অনুমতি ছাড়া ইসলামী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও মেঘনা ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে মোট ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন তিনি।
জানা গেছে, কেবল ইসলামী ব্যাংকের কয়েকটি শাখা থেকেই তোলা হয় প্রায় ১ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংক থেকে তোলা হয় ৩০ লাখ, সোনালী ব্যাংক থেকে ৩৬ লাখ এবং মেঘনা ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা। জাহাঙ্গীর দাবি করেছেন, এই টাকা ব্যবহার করা হয়েছে আরামিটের অন্য দুই কর্মকর্তা—এজিএম মো. আবদুল আজিজ ও উৎপল পালের আইনি খরচ মেটাতে। এই দুই কর্মকর্তা ১৭ সেপ্টেম্বর অর্থপাচার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
তবে দুদকের কর্মকর্তাদের মতে, দেশের ভেতরে ব্যাংক জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছেন জাবেদ ও তার ঘনিষ্ঠরা। নতুন করে গ্রেপ্তার হওয়া জাহাঙ্গীর আলম এই চক্রের আরেকটি অংশ মাত্র। নতুন করে তোলা এই টাকা কেবল আইনি খরচ নয়, আত্মসাৎ ও পাচারের সঙ্গেও জড়িত।
এ অভিযোগ যুক্ত হয়েছে আগের মামলার সঙ্গেই। গত ২৪ জুলাই দুদকের উপপরিচালক মশিউর রহমান বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে সাবেক মন্ত্রী জাবেদ, তার স্ত্রী রুকমীলা জামান, ভাইবোনসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অভিযোগে বলা হয়, জাবেদের মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তাদের নামে ভুয়া প্রতিষ্ঠান খোলা হয়—ভিশন ট্রেডিং, আলফা ট্রেডার্স, ক্ল্যাসিক ট্রেডিং, মডেল ট্রেডিং ও ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে ইউসিবিএল ব্যাংকের চট্টগ্রাম বন্দর শাখায় হিসাব খোলা হয় এবং গম, ছোলা, হলুদ ও মটর আমদানির নামে ২৫ কোটি টাকার টাইম লোন অনুমোদন করানো হয়।
ব্যাংকের ক্রেডিট কমিটির ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ সত্ত্বেও ২০২০ সালের ৮ মার্চ পরিচালনা পর্ষদ এই ঋণ অনুমোদন দেয়। পরে সেই টাকা ভাগ করে চারটি ভুয়া হিসাবে স্থানান্তর করা হয় এবং পরবর্তীতে বিদেশে পাচার করা হয়। তদন্তে দুদক জানতে পারে, এই অর্থপাচারের ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৯-২০ সালে, যখন জাবেদ ভূমিমন্ত্রী ছিলেন।
এরই মধ্যে ১৭ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হওয়া দুই কর্মকর্তা আবদুল আজিজ ও উৎপল পাল দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন, জাবেদের নির্দেশেই যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে ২৫ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। দুদকের হাতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জাবেদ পরিবারের বিপুল সম্পদ রয়েছে বিদেশে—শুধু যুক্তরাজ্যেই ৩৪৩টি সম্পত্তি, দুবাইয়ে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১০টি বাড়ি। এছাড়া মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় রয়েছে একাধিক সম্পদ।
গত বছরের ৭ অক্টোবর আদালত জাবেদ ও তার স্ত্রীকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিলেও তারা বিদেশে পালিয়ে যান। বর্তমানে তারা দুবাইয়ে অবস্থান করছেন।