পারিবারিক কলহের জের ধরে শাশুড়ির সঙ্গে পুত্রবধূর বিবাদ হয়। এ ঘটনায় শাশুড়ি তার পুত্রবধূ ও ছেলের নামে মামলা দায়ের করেন থানায়। সেই মামলায় কারাগারে যান পুত্রবধূ ও তার শিশু সন্তান। এই অপমান সইতে না পেরে গলায় দড়ি দেয় ছেলে।
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) মধ্যরাত ১২টায় এ হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের পটিয়ায়।
নেজাম উদ্দিন (৩০) উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও জামাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি হাবিলাসদ্বীপ উচ্চ বিদ্যালয়ের দপ্তরি ছিলেন।
জানা গেছে, নেজাম উদ্দিনের মা রাশেদা বেগম ও স্ত্রী বেবি আকতারের ঝগড়া বিবাদ হয়। তারা বউ-শাশুড়ি সম্পর্কে ফুফু-ভাতিজি। সেই ঝগড়ার জের ধরে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি মা রাশেদা বেগম পটিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় নেজামের স্ত্রী বেবি আকতারকে। মায়ের দায়ের করা সেই মামলায় রেহাই পাননি নেজাম উদ্দিনও। নিজ মায়ের দায়ের করা মামলায় আসামি তিনিও। আদালত সেদিন মামলাটি আমলে নিয়ে পটিয়া থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। প্রায় সাত মাস পর ২৬ আগস্ট পটিয়া থানা পুলিশ মামলাটির তদন্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দেয়।
আদালত তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আদালতের পরোয়ানা জারি করার পর গত বৃহস্পতিবার সকালে ওই মামলার আসামি স্বামী-স্ত্রী আদালতে স্বেচ্ছায় হাজির হন। এদিন আদালতের বিচারক বেগম তাররাহুম আহমেদ মামলার প্রধান আসামি বেবি আকতারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আর স্বামী নেজাম উদ্দিনকে এ মামলায় জামিন দেন।
মায়ের দায়ের করা মামলায় স্ত্রী ও ছোট্ট শিশুসন্তান জেলে যাওয়ার অপমান সইতে না পেরে শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নিজ ঘরে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন নেজাম।
শুক্রবার মধ্য রাতে নেজাম উদ্দিনের পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশীরা তার ঘরের দরজা খোলা দেখে ঘরে ঢুকে দেখতে পান নেজাম গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে আছে। এ অবস্থায় স্থানীয়রা পটিয়া থানা পুলিশকে খবর দিলে, পুলিশ রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। লাশটির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করার পর শনিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুজ্জামান বলেন, বউ-শাশুড়ির পারিবারিক ঝগড়া বিবাদের জেরে শাশুড়ির দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলায় গত বৃহস্পতিবার নিহত নেজাম উদ্দিনের স্ত্রীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এদিন এ মামলায় নিহত নেজাম উদ্দিনকে জামিন দেন। তারা বউ-শাশুড়ি সম্পর্কে ফুফু-ভাতিজি। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে।
ডিজে