যে নামে ডাকলেই কবুল হয় দোয়া: আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নাম ‘’ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম’

মহান আল্লাহ তাআলা সমগ্র বিশ্বজগতের স্রষ্টা ও প্রতিপালক। তাঁর মহিমা, শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব প্রকাশ করে এমন অসংখ্য সুন্দর নাম রয়েছে, যেগুলোকে আল-আসমাউল হুসনা বা সুন্দরতম নাম বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর গুণবাচক নাম ও সিফাত অগণিত। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:

“আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সর্বোত্তম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সে নামেই ডাকো।” (সুরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৮০)

ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম: একটি ইসমে আজম

আল্লাহর ৯৯টি নামের মধ্যে “ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম” একটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ নাম, যা ইসমে আজম বা সর্বশ্রেষ্ঠ নাম হিসেবে বিবেচিত। জালাল অর্থ মহিমান্বিত, আর ইকরাম অর্থ সম্মান ও মহানুভবতা। এই নামটি পবিত্র কুরআনে দু’বার উল্লেখ হয়েছে:

  1. “আর কেবল তোমার মহান ও সম্মানিত রবের সত্তাই স্থায়ী থাকবে।” (সুরা আর-রহমান, আয়াত: ২৭)
  2. “মহিমান্বিত ও সম্মানিত তোমার রবের নাম।” (সুরা আর-রহমান, আয়াত: ৭৮)

এই নামের অর্থ হলো—সমস্ত সৃষ্টিজগতের মালিক, যিনি সমস্ত ভয় ও প্রশংসার একমাত্র হকদার, মহান, দয়ালু ও অনুগ্রহশীল।

এই নামের আমল ও ফজিলত

১. নামাজের পরের দোয়ায়:
নবীজি (সা.) নামাজ শেষে এই দোয়া পড়তেন:

“আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারাকতা ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম।”
(অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি শান্তিদাতা, আপনার কাছ থেকেই শান্তি আসে। আপনি বরকতময়, হে মহিমান্বিত ও মহানুভব!)

২. বিশেষ দোয়ায়:
হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি নবীজি (সা.)-এর সামনে এই দোয়া পড়লেন:

“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্না লাকাল হামদু, লা ইলাহা ইল্লা আনতাল মান্নানু, বাদিউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম, ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুম!”
(অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, কারণ সমস্ত প্রশংসা আপনারই। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আপনি দাতা, আসমান-জমিনের স্রষ্টা, হে মহিমান্বিত ও মহানুভব! হে চিরঞ্জীব, হে প্রতিষ্ঠাতা!)

৩. দোয়া কবুলের মাধ্যম:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“তুমি আল্লাহর কাছে তাঁর ইসমে আজম দ্বারা প্রার্থনা করলে, তিনি তা কবুল করেন এবং এভাবে চাইলে তিনি দান করেন।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১৪৯৩)

ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম-এর বিশেষ তাৎপর্য

  • এটি একটি শক্তিশালী ইসমে আজম, যা দিয়ে দোয়া করলে আল্লাহ তা দ্রুত কবুল করেন।
  • নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতের সকল কাজ সহজ করে দেন।
  • বিপদ-আপদ ও দুশ্চিন্তা দূর করতে এই নামের জিকির অত্যন্ত কার্যকর।

কুরআন ও হাদিসে আল্লাহর নামের জিকিরের গুরুত্ব

আল্লাহ তাআলা বলেন:

“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো।” (সুরা আল-আহযাব, আয়াত: ৪১)

“যারা আল্লাহকে বেশি স্মরণ করে, নিশ্চয়ই তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।” (সুরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩५)

উপসংহার

আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহের মধ্যে “ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম” একটি অতুলনীয় নাম, যা দিয়ে দোয়া করলে মহান আল্লাহ সাড়া দেন। মুমিনের উচিত নিয়মিত এই নামের জিকির করা এবং এর ফজিলত লাভের চেষ্টা করা।

দোয়া:
“হে আল্লাহ! আমাদেরকে আপনার মহিমাময় নাম ‘ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম’-এর ফজিলত দান করুন এবং এই নামের মাধ্যমে আমাদের দোয়াগুলো কবুল করুন। আমিন।”

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm