স্নায়ুর রোগ পিএলআইডির কোন্ লক্ষণে সার্জারি জরুরি, কেন দরকার ম্যানুয়াল থেরাপি?

শুরুতে অবহেলায় পরে হয় বড় জটিলতা

বর্তমানে আমাদের দেশে পিএলআইডি অত্যন্ত পরিচিত একটি সমস্যা। অনেক রোগী শুরুতে ব্যথাকে সাধারণ কোমরব্যথা ধরে নিয়ে অবহেলা করেন। কিন্তু সময়মতো সতর্ক না হলে এই ব্যথা ধীরে ধীরে স্নায়ুর ওপর চাপ বাড়ায় এবং চলাফেরায় জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই চিকিৎসার পাশাপাশি রোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়াই সবচেয়ে জরুরি।

ডিস্ক সরে গেলে কী ঘটে

মেরুদণ্ডের নিচের অংশের ডিস্ক সরে গিয়ে স্নায়ুর ওপর চাপ সৃষ্টি করলে পিএলআইডি হয়। দেশে কোমরব্যথার অন্যতম বড় কারণও এটি। তবে বিষয়টি শুধু ডিস্কের সীমাবদ্ধ নয়, কোমরের মাংসপেশির অবস্থাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মাংসপেশির পরিবর্তন কেন ভয়ংকর

অনেক ক্ষেত্রে রোগীর মাল্টিফিডাস পেশি মাত্র এক মাসের মধ্যেই শুকিয়ে যেতে পারে, যা মেরুদণ্ডকে স্থিতিশীল রাখার কাজে সহায়তা করে। একইভাবে কোয়াড্রেটাস লাম্বোরাম দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সোয়াস মেজর শক্ত হয়ে ভঙ্গিতে পরিবর্তন আনে। এতে ফ্ল্যাট ব্যাক বা একদিকে বেকে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

হাঁটলেই ব্যথা বাড়ে কেন

মাত্র কিছুক্ষণ হাঁটার পর কোমর ও পায়ে ব্যথা বেড়ে যাওয়ার কারণও এখানেই। মাংসপেশির এসব পরিবর্তন ঠিক না হলে শুধুই ডিস্কের চিকিৎসায় পুরোপুরি আরোগ্য আসে না। অনেক ক্ষেত্রে নতুন লেভেলেও ডিস্ক প্রোলাপ্স দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, হাঁটার সময় ইরেক্টর স্পাইন, মাল্টিফিডাস ও কোয়াড্রেটাস লাম্বোরাম স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি কাজ করে। শুরুতে এতে সাময়িক সহায়তা মিললেও কিছুদিন পর পেশি ক্লান্ত হয়ে ব্যথা বাড়িয়ে তোলে।

ট্রাকশন–ইলেক্ট্রোথেরাপি যথেষ্ট নয়

পিএলআইডি রোগীর চিকিৎসায় কেবল ট্রাকশন বা ইলেক্ট্রোথেরাপি যথেষ্ট নয়। সুস্থ হতে হলে ম্যানুয়াল থেরাপির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত মাংসপেশি পুনরায় শক্তিশালী করা জরুরি।

সার্জারি কোন অবস্থায়

সার্জারি প্রয়োজন হয় নির্দিষ্ট কিছু অবস্থায়, যেমন ফিজিওথেরাপি, ব্যায়াম ও ওষুধ নেওয়ার পরও পায়ে দুর্বলতা, অবশভাব বা প্রস্রাব–নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দিলে। শুধু ব্যথার কারণে সার্জারি করানো উপযুক্ত নয়। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, পিএলআইডি অপারেশন করা রোগীদের ৬৭ শতাংশের ব্যথা থেকেই যায়, যদিও ২৩ শতাংশ রোগী সার্জারির পর সম্পূর্ণ সুস্থ হন।

পরামর্শ

পিএলআইডি–এর চিকিৎসায় অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে এবং দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্টের কাছ থেকে ম্যানুয়াল থেরাপি ও ব্যায়াম নিতে হবে।

লেখক: ফিজিওথেরাপিস্ট, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল

ksrm