চট্টগ্রামের দলীয় সমাবেশে প্রশাসনকে ‘আন্ডারে নিয়ে আসা’ নিয়ে জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্য ছড়িয়ে পড়তেই তীব্র বিতর্কে সরব হয়ে উঠেছে এবার পুলিশ ক্যাডারের শীর্ষ সংগঠন। সোমবার (২৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এক কড়া প্রতিবাদলিপি দিয়ে জানিয়েছে, একটি রাজনৈতিক দলের সাবেক সংসদ সদস্য যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সংগঠনের নজরে আসে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান স্বাক্ষরিত সেই প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ওই বক্তব্যে পুলিশকে দলীয় নির্দেশে মামলা গ্রহণ, আসামি গ্রেপ্তার ও প্রশাসনকে অধীনস্থ করার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যা গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
‘এমন মন্তব্য পুলিশকে হেয়প্রতিপন্ন করার নামান্তর’
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন জানায়, বাংলাদেশ পুলিশ সংবিধান ও বিধিবদ্ধ আইনের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। গত ১৭ বছরে কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষী সদস্যের কর্মকাণ্ডের কারণে জনগণের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলেও গত ৫ আগস্টের ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর পুলিশ নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করছে। তারা জানায়, পুলিশ এখন কোনো রাজনৈতিক দল বা মতের পক্ষে অবস্থান না নিয়ে জনআকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই কাজ করছে এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছে। রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হওয়ার দিন শেষ হয়েছে এবং পুলিশ বাহিনী এখন কেবল জনগণের কল্যাণ ও জবাবদিহিতার নীতিতে বিশ্বাসী।
সংগঠনটি রাজনৈতিক নেতাদের এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষামূলক মন্তব্যকে পুলিশকে হেয়প্রতিপন্ন করার নামান্তর বলে আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
সমাবেশের বক্তব্য ঘিরে তোলপাড়
গত শনিবার (২২ নভেম্বর) চট্টগ্রাম নগরের জিইসি কনভেনশন হলে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক নির্বাচনকেন্দ্রিক সমাবেশে দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম–১৫ আসনের মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী নির্বাচনী এলাকায় প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে আনার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রশাসনের কর্মীরা দলের নির্দেশে চলবে, দলের কথায় মামলা ও গ্রেপ্তার হবে এবং পুলিশ মাঠে প্রার্থীকে অনুসরণ করে প্রটোকল দেবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকসহ স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নির্বাচনী প্রতীকের পক্ষে প্রচারেও সম্পৃক্ত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর এমন বক্তব্য ছড়িয়ে পড়তেই দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর শাখার আহ্বায়ক মো. এরশাদ উল্লাহ এবং সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান রোববার এক যৌথ বিবৃতিতে ওই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান। বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য শাহজাহান চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বিএনপি নেতারা বলেন, ‘গণতন্ত্র, নির্বাচন ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে এই উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদানের কারণে শাহজাহান চৌধুরীকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এর তীব্র সমালোচনা করে শাহজাহান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
নেতার দায় নেবে না দল
এদিকে প্রশাসন নিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্যটি তাঁর নিজস্ব এবং এই বক্তব্য জামায়াত সমর্থন করে না বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম জোনের প্রধান মুহাম্মদ শাহজাহান।
রোববার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাতটায় দলটির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে এ কথা জানান মুহাম্মদ শাহজাহান। বিবৃতিতে মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘বক্তব্যটি আমরা দেখেছি। এটা একান্তই ওনার (শাহজাহান চৌধুরী) বক্তব্য। এটার ব্যাখ্যা উনি ভালো দিতে পারবেন। তাঁর এই বক্তব্য জামায়াত সমর্থন করে না। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এ ঘটনায় আমরা অভ্যন্তরীণভাবেও আমাদের মতো ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
মুহাম্মদ শাহজাহান আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, প্রশাসন পূর্ণ পেশাদারত্বের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। এখানে আমাদের হস্তক্ষেপের কিছু নেই। অতীতে প্রশাসনের যারা পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেননি, তাঁরা দেশের ক্ষতি করেছেন।’
সিপি


