চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থী ও আহলে সুন্নতপন্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকের মাধ্যমে উভয়পক্ষ শান্তিপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। এতে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম (হাটহাজারী মাদরাসা) কর্তৃপক্ষ, আহলে সুন্নতে ওয়াল জামাআতের প্রতিনিধি, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘সবপক্ষের উপস্থিতিতে বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। উভয়পক্ষ ভবিষ্যতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে একমত হয়েছেন। যেকোনো অনুষ্ঠানের আগে তারা আলোচনার মাধ্যমে করণীয় ঠিক করবেন এবং উভয়পক্ষের স্বেচ্ছাসেবক পুলিশকে সহযোগিতা করবে।’
তিনি আরও জানান, হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড থেকে র্যাব কার্যালয় পর্যন্ত সড়কে মাইক ব্যবহার ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি শনিবারের সংঘর্ষে আহতদের চিকিৎসা ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়েও সম্মত হয়েছে সবাই। বৈঠকে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক, ইউএনও মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মুমিন ও সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) ঈদে মিলাদুন্নবীতে এক যুবক চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা লক্ষ্য করে আঙুল উঁচিয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করার জের ধরে হাটহাজারীতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে গভীর রাতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। জুলুস থেকে ফেরত সুন্নীপন্থিদের বিভিন্ন বাসে কওমী মতাদর্শের লোকজন হামলা করার পর সুন্নীপন্থীরাও সংঘবদ্ধ হয়ে পাল্টা হামলা চালায়। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১৮০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে প্রায় দেড়শতাধিক আহতকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং গুরুতর আহত ২০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আনা হয়।
আহতদের মধ্যে দুইজনের পরিচয় জানা যায়। এরা হলেন—আবু তাহের (১৬) ও হাসান মারুফ (১৭)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাটহাজারী বাস স্ট্যান্ড মোড়ে রাতে জুলুস থেকে ফেরার পথে সুন্নীপন্থিদের বেশ কয়েকটি বাস ভাঙচুর করে কওমীপন্থিরা। এর মধ্যে বাসে থাকা অনেকে ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত হন। পরে সুন্নীপন্থিরাও ধাওয়া দেন কওমীপন্থিদের। এ নিয়ে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটে। একপর্যায়ে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়ক অবরোধ করে রাখে দারুল উলুম মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। এর ফলে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সংঘর্ষের ঘটনায় জনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। শনিবার রাত ১০টা থেকে রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টা পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর হয়।
এর আগে হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে মধ্যমা আঙ্গুল দেখিয়ে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার ঘটনায় আরিয়ান ইব্রাহীম (২০) নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশ। ঘটনার পর ওই যুবক ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা চাইলেও এ ঘটনায় হাটহাজারীতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে জশনে জুলুস থেকে ফেরার পথে ফটিকছড়ি পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শফিকিয়া দরবার শরীফ এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
জেজে/ডিজে