২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ, জাবেদসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের তৃতীয় মামলা

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তার স্ত্রী, বোনসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি মামলা করেছে। অভিযোগ—ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে নিজের মালিকানাধীন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল) থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পাচার করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) চট্টগ্রামে দুদকের জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহা. শোয়াইব ইবনে আলম। এ নিয়ে একই ধরনের প্রক্রিয়ায় ইউসিবিএল থেকে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় জাবেদ পরিবারের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হলো। আগের দুটি মামলায় আত্মসাতের পরিমাণ যথাক্রমে ২৫ কোটি ও ১৫ কোটি টাকা।

দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলায় যা উল্লেখ আছে

মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ (৫৬) ও তার স্ত্রী, ইউসিবিএলের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমীলা জামান (৪৬)। তালিকায় রয়েছেন তার দুই বোন রোকসানা জামান চৌধুরী ও আফরোজা জামান চৌধুরীসহ ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ মোট ২৪ জন।

এজাহারে বলা হয়েছে, জাবেদের পারিবারিক মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার সৈয়দ কামরুজ্জামানের ফুফাত ভাই সৈয়দ নুরুল ইসলামের নামে ‘ক্রিসেন্ট ট্রেডার্স’ নামে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়। ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর ইউসিবিএলের জুবিলী রোড শাখায় প্রতিষ্ঠানটির নামে একটি চলতি হিসাব খোলা হয়।

পরে ২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ‘ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল’ বাবদ ২৫ কোটি টাকার একটি ‘টাইম লোনের’ আবেদন করা হয়। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই না করেই মিথ্যা তথ্য দিয়ে ‘সন্তোষজনক’ প্রতিবেদন দেন। ৬ ফেব্রুয়ারি সেই আবেদন করপোরেট ব্যাংকিং ডিভিশনে পাঠানো হয়।

অবাক করার বিষয়, ব্যাংকের ক্রেডিট কমিটি ঋণ দেওয়ার বিপক্ষে ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল। তবু সাবেক মন্ত্রী জাবেদের ‘প্রভাব’ কাজে লাগিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি ইউসিবিএলের বোর্ড সভায় ঋণ অনুমোদন পায়।

পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৩ কোটি এবং ২০ ফেব্রুয়ারি ১২ কোটি টাকা ওই হিসাব নম্বরে ছাড় করা হয়।

অতীতের মামলা ও পলায়ন

এর আগে গত ২৪ জুলাই ২৫ কোটি টাকা এবং ৩১ জুলাই ১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে জাবেদ পরিবারের বিরুদ্ধে। মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়াল ৩টি এবং আত্মসাতের মোট পরিমাণ ৬৫ কোটি টাকা।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভূমি প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন। তবে ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে তার বিরুদ্ধে বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ার অভিযোগ ওঠে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যেই ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট লন্ডনে পাড়ি জমান তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা।

এদিকে দুদক বলছে, এ ঘটনায় দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪২০, ৪৬১, ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের বিভিন্ন ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

জেজে/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm