৩৬ কোটি ব্যয়ে নামেই সৌন্দর্যবর্ধন, কক্সবাজারের ৩ পুকুর যেন পশু চারণভূমি, চুরি হয়ে গেছে লাইট

পর্যটন শহর কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী তিন পুকুর জৌলুস হারাতে বসেছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, চোরের উৎপাতসহ বিভিন্ন কারণে পুকুরগুলো আগের মতো নেই। প্রায় মাটিতে ভরে গিয়ে পানি শুকিয়ে গেছে পুকুরগুলোর। ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সৌন্দর্যবর্ধন করা এসব পুকুর বর্তমানে পশুর চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে।

৩৬ কোটি ব্যয়ে নামেই সৌন্দর্যবর্ধন, কক্সবাজারের ৩ পুকুর যেন পশু চারণভূমি, চুরি হয়ে গেছে লাইট 1

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পুকুরগুলোর উন্নয়নে নজর নেই কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। রাতের বেলা ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়। লাইট, বিভিন্ন স্থাপনার অংশ চুরি হয়ে গেছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এগুলো এখন গরু-ছাগলের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে।

৩৬ কোটি ব্যয়ে নামেই সৌন্দর্যবর্ধন, কক্সবাজারের ৩ পুকুর যেন পশু চারণভূমি, চুরি হয়ে গেছে লাইট 2

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কোটি টাকা ব্যয়ে সৌন্দর্যবর্ধন করা তিনটি পুকুর যেন ছাগলের খামার। কক্সবাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী নাপিতা পুকুরের অবস্থা এখন একই রকম। পুকুরটি হয়ে পড়েছে ময়লার ভাগাড় ও ছাগল চারণভূমি। ঐতিহ্যবাহী এই পুকুরের চারপাশে চলাচলের রাস্তাগুলোতেও আবর্জনার স্তুপ জমছে।

নাপিতা পুকুরের মতো একইভাগ্য লালদীঘি ও গোলদীঘির। ঐতিহ্যবাহী এই পুকুরগুলো এখন পড়ে আছে চরম অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায়। শুকিয়ে গেছে পানি। ছুটির দিনে গানের সঙ্গে পানির কৃত্রিম ঝর্ণার প্রদর্শনীও বন্ধ গোলদীঘিতে। চুরি হয়ে গেছে মূল্যবান আলোকসজ্জাগুলোও।

এদিকে ৩ পুকুরের এমন বেহাল দশার জন্য স্থানীয়রা দুষছেন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে। স্থানীয় বাসিন্দা সাইদ স্বাধীন মনে করেন, কোনো প্রকার তদারকি এবং রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় পুকুর গুলোর এমন অবস্থা।

গোলদীঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা আসিফ বলেন, পর্যটননগরী কক্সবাজারের জন্য একটি অভিনব পর্যটন স্পট হতে পারতো এসব জলাধার। এগুলোকে তৈরি করাও হয়েছিল বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে। তবে মাত্র কয়েক বছরেই পুকুরগুলোতে রাতে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

রাতে পুকুরের ভুতুড়ে পরিবেশের কথা উল্লেখ করে অন্য এক বাসিন্দা জাহেদুল হক বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ লাইট না থাকা এবং কিছু কিছু লাইট চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে পর্যটক তো দূরের কথা স্থানীয়রাও এসব পুকুরপাড়ে বসতে ভয় পায়। আর পুকুরগুলোর আশেপাশে ময়লা আবর্জনা তো আছেই।

জানা গেছে, কক্সবাজার শহরকে পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার অংশ হিসেবে ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে লালদীঘি, গোলদীঘি ও নাপিতা পুকুরকে কেন্দ্র করে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে কক্সবাজারে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। যা ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে উদ্বোধন করা হয়। এরপর দুই বছর ঠিকঠাক তদারকি চললেও ২০২২ সালের আগস্টে কউক চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত কমোডর নুরুল আবছার। এরপর থেকে অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে যায় গোলদীঘির ওয়াটার লাইট শোসহ তিন পুকুরের বিশের তদারকি।

এদিকে গত ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এসব পুকুর কক্সবাজার পৌরসভাকে হস্তান্তর করে। তারপর পুকুরগুলোর তদারকি ব্যবস্থা আরো নাজেহাল হতে থাকে।

পৌর কর্তৃপক্ষের বলছে, ৫ আগস্টে বিভিন্ন স্থাপনার মতো পুকুরগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অনেক কিছুই চুরি হয়ে গেছে।

তবে পুকুরগুলোর জন্য প্রকৌশলী নিয়োগের কথা জানিয়ে কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নেওয়ার পর পুকুরগুলো পর্যবেক্ষণ করে প্রকৌশলী নিয়োগ করা হয়েছে। দ্রুত পুকুরগুলোর সংস্কার কাজ শুরু হবে। এছাড়া এসব পুকুরের রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির জন্য কিছু আনসারকর্মীও নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতি পুকুরের জন্য ৪ জন করে আনসার বাহিনীর একটি দল গঠন করা হয়েছে। ফলে পুকুরগুলো ঘিরে সকল সমস্যা সমাধান ও পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে।

কক্সবাজার শহরের অগ্নিনির্বাপণের ক্ষেত্রেও এই পুকুরগুলোর পানির ওপর নির্ভর করতে হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে। তাই দ্রুত পুকুরগুলোকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm