“রক্তের বন্ধনই একমাত্র বন্ধন নয়, কিন্তু আল্লাহর নির্দেশিত বন্ধনই সবচেয়ে মজবুত” – এই সত্যটি ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে। যেখানে দুনিয়ার টানাপোড়েনে আত্মীয়তার বন্ধন শিথিল হচ্ছে, সেখানে ইসলামের শিক্ষা আমাদের পথ দেখায়।
কুরআনের অমোঘ বাণী
“আল্লাহ তা’আলা যেসব সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা তা যথাযথভাবে রক্ষা করে, তাদের জন্যেই রয়েছে পরকালীন মুক্তি ও সফলতা।”
(সুরা রাদ: ২১-২২)
আত্মীয়তা রক্ষার প্রকৃত সংজ্ঞা
- সম্পর্ক বজায় রাখা নয়, বরং ছিন্ন সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করাই প্রকৃত ইবাদত
- একতরফা ভালোবাসা ও সদ্ব্যবহার করাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য
- অন্যায় সত্ত্বেও ক্ষমা করে দেওয়ার মানসিকতা রাখা
রাসুল (সা.)-এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা
প্রকৃত আত্মীয়তা রক্ষাকারী কে?
“হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী সে নয় যে শুধু বিনিময় করে। বরং প্রকৃত সম্পর্ক রক্ষাকারী সে, যার সাথে আত্মীয়তা ছিন্ন করলেও সে তা পুনঃস্থাপন করে।'”
অন্যায়ের জবাব কীভাবে?
“হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি নবীজির কাছে অভিযোগ করল: ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমার আত্মীয়রা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে, অথচ আমি তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করি।’ উত্তরে রাসুল (সা.) বললেন: ‘তুমি যদি সত্য বলো, তবে যেন তাদের মুখে গরম ছাই দেওয়া হচ্ছে। আর তুমি যতদিন এভাবে থাকবে, ততদিন আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী তোমার সাথে থাকবেন।'”
রিজিক ও আয়ু বৃদ্ধির উপায়
“হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে তার রিজিক বৃদ্ধি পাক এবং আয়ু দীর্ঘ হোক, সে যেন আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখে।'”
ইসলামে আত্মীয়তার পরিধি
- উর্ধ্বতন: পিতা-মাতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী
- সমান্তরাল: ভাই-বোন, চাচা-ফুফু, মামা-খালা
- অধস্তন: সন্তান-সন্ততি, ভাইপো-ভাগ্নে, ভাতিজি-ভাগ্নি
- সম্পর্কিত: শ্বশুর-শাশুড়ি, জামাই-বউ, দেবর-ননদ
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের ভয়াবহ পরিণতি
“পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘তোমরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এরা তারাই যাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ এবং যাদেরকে তিনি বধির ও অন্ধ করে দেন।'”
(সুরা মুহাম্মদ: ২২-২৩)
আত্মীয়তার ফজিলত
- জান্নাতের গ্যারান্টি: আত্মীয়তার বন্ধন জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম
- রিজিকে বরকত: জীবিকা প্রশস্ত হয়
- আয়ু বৃদ্ধি: আল্লাহ তায়ালা বয়স বাড়িয়ে দেন
- আল্লাহর রহমত: বিশেষ মাগফিরাত লাভ
- সম্মান বৃদ্ধি: সমাজে মর্যাদা বাড়ে
- দোয়া কবুল: আত্মীয়দের দোয়া বিশেষভাবে কবুল হয়
- কঠিন সময়ে সাহায্য: বিপদে আত্মীয়রাই এগিয়ে আসে
মুমিনের করণীয়
- নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া
- প্রয়োজনে আর্থিক সাহায্য করা
- ঈদ-উৎসবে দেখা করা
- বিপদে পাশে দাঁড়ানো
- ক্ষমা প্রার্থনা করা
- সামর্থ্য অনুযায়ী উপহার দেওয়া
- অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া
- মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা
- সন্তানদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলা
- পরস্পরের জন্য দোয়া করা
বাস্তব জীবনে প্রয়োগ
- দূরের আত্মীয়: ফোন/ভিডিও কলে যোগাযোগ রাখুন
- বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক: প্রথমে ক্ষমা চেয়ে নিন
- আর্থিক অসামর্থ্য: অন্তত দোয়া ও খোঁজখবর রাখুন
- অবহেলিত আত্মীয়: বিশেষভাবে খেয়াল রাখুন
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে আত্মীয়তার হক যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।