ইসলামী ব্যাংকে ‘দক্ষতা পরীক্ষা’র আড়ালে সাড়ে ৫ হাজার কর্মকর্তা ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা!
মানা হচ্ছে না আদালতের নিষেধাজ্ঞাও
চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তায় পড়েছেন ইসলামী ব্যাংকের কয়েক হাজার কর্মকর্তা। অভিযোগ উঠেছে, ‘বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন’ পরীক্ষার অজুহাতে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ কর্মকর্তাকে ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আদালতের স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও আবারও পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করায় কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তোলা হয়। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আব্দুস সাত্তার।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ‘স্পেশাল কম্পিটেন্সি অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট’ নামে একটি বিশেষ পরীক্ষা চালুর উদ্যোগ নেয়। এর মাধ্যমে সিনিয়র অফিসার, অফিসার, অফিসার (ক্যাশ), জুনিয়র অফিসার (ক্যাশ) ও অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (ক্যাশ)সহ বিভিন্ন পদে থাকা প্রায় ৫৫০০ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার পাঁয়তারা চলছে।
এডভোকেট আব্দুস সাত্তার অভিযোগ করেন, এই পরীক্ষা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং দেশের সংবিধান, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬, সার্ভিস রুলস ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং আইন-বিধির পরিপন্থী। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হলে আদালত নিয়মিত প্রমোশন পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেন এবং বিশেষ দক্ষতা পরীক্ষার প্রক্রিয়া স্থগিত করেন। বাংলাদেশ ব্যাংককেও এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। কিন্তু আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নতুন করে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে।
ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ গত ২২ সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক এবং অনুপস্থিত থাকলে কোনো কর্মকর্তাকে আর সুযোগ দেওয়া হবে না। এই শর্তকে কেন্দ্র করে কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়ে।
লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, ব্যাংকে বর্তমানে প্রায় ৮ হাজার কর্মকর্তা বিভিন্ন পদে কর্মরত। কিন্তু এই পরীক্ষায় শুধুমাত্র ২০১৭ সালের পর নিয়োগপ্রাপ্তদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলেছেন কর্মকর্তারা। তাদের আশঙ্কা, এই পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে কয়েক হাজার কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে সরিয়ে দিতে চায়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আইনজীবীরা বলেন, সংবিধানের ২৭, ২৯ ও ৩১ অনুচ্ছেদে সমতা, সমঅধিকার ও সমান কর্মসংস্থানের সুযোগের যে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে, ইসলামী ব্যাংকের এই পদক্ষেপ তা সরাসরি লঙ্ঘন করছে। তারা অবিলম্বে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত বাতিল করে নিয়মিত প্রমোশন পরীক্ষা আয়োজনের দাবি জানান।
এর আগে গত ১৪ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ প্রথমে ২৯ আগস্ট এই পরীক্ষা নেওয়ার তারিখ ঘোষণা করে। পরে কর্মকর্তারা এর বিরুদ্ধে রিট করলে হাইকোর্ট ২৬ আগস্ট পরীক্ষা স্থগিতের নির্দেশ দেন। কিন্তু মাত্র এক মাসের মাথায় কর্তৃপক্ষ আবারও নতুন তারিখ ঘোষণা করে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান আলী চৌধুরী, রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী কে. এম. সাইফুল ইসলাম ও এডভোকেট মুশফিকুল আবরার।