চট্টগ্রামের রাস্তায় ঝুঁকি নিতে গিয়ে মারা যায় ৯২ ভাগ লোক, ৭০ ভাগ বাইকার গতিসীমা মানে না
‘সেফটি সেল’ করবে সিটি কর্পোরেশন
চট্টগ্রাম নগরের ৭০ শতাংশ মোটরসাইকেল চালক গতিসীমা মানেন না। এছাড়া ৪৪ শতাংশ গাড়ি বিআরটিএ’র নির্ধারিত গতিসীমাও মেনে চলে না। রোড সেফটি রিপোর্ট অনুযায়ী, নগরে রোড ক্র্যাশে নিহতদের ৯২ শতাংশই ছিলেন ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক ব্যবহারকারী। আর ৪৪ শতাংশ গাড়ি নির্ধারিত গতিসীমার চেয়ে বেশি গতিতে চলে। তবে আমাদের নগরে আয়তনের তুলনায় যে পরিমাণ সড়ক থাকা প্রয়োজন, তা নেই। বিভিন্ন কারণে সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে শতভাগ মানদণ্ডও অনুসরণ করা যায় না। এজন্য সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রোড সেফটি সেল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন।
চট্টগ্রাম নগরে সড়ক ব্যবহারে আচরণগত ঝুঁকি পর্যবেক্ষণে পরিচালিত এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নগরের জিইসির একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে এই জরিপের ফল তুলে ধরা হয়। বৈশ্বিক সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেইফটি (বিআইজিআরএস) কর্মসূচির আওতায় জেএইচ-আইআইআরইউ ও সিআইপিআরবি যৌথ উদ্যোগে ‘রোড সেফটি রিস্ক ফ্যাক্টরস ইন চট্টগ্রাম : স্ট্যাটাস সামারি রিপোর্ট ২০২৪’ শিরোনামে এ জরিপ পরিচালিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, একটি শহরের আয়তনের তুলনায় যে পরিমাণ সড়ক থাকা প্রয়োজন, চট্টগ্রামে তা নেই। বিভিন্ন বাস্তবিক কারণে সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষে সব মানদণ্ড শতভাগ অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। আমরা নগরে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে একটি রোড সেফটি সেল করতে যাচ্ছি। এই সেলের কাজ হবে, সড়কগুলোতে স্পিড সাইন ও গতি নিয়ন্ত্রক বসানোর মতো কারিগরি কাজগুলো সমন্বয় করা।
তিনি আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আজকের এই জরিপের ফলাফল আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়ক হবে। গ্রিন, ক্লিন ও হেলদি সিটি বিনির্মাণে আমরা কাজ করছি।
সিআইপিআরবি’র রোড সেফটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক কাজী বোরহান উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ শাফকাত আমিন।
এসময় তথ্য সংগ্রহের স্থান নির্বাচন, তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিসহ পুরো জরিপ প্রক্রিয়ার বিবরণ দেন সিআইপিআরবি’র পরিচালক ড. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী। তিনি জানান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ২০২৪ সালের মে মাসে মোটরযানের গতিসীমা সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রকাশ করেন। এতে হাইওয়ে ও এক্সপ্রেসওয়ের জন্য গাড়ি সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করা হয় ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। পাশাপাশি সড়ক ও যানবাহনের ধরন অনুযায়ী যানবাহনের গতিসীমা বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে কর্তৃত্ব দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে জরিপের ফল উপস্থাপন করেন জেএইচ-আইআইআরইউ-এর গবেষক ডা. শিরিন ওয়াধানিয়া। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি রোড সেফটি রিপোর্ট ২০২১-২৩ অনুযায়ী, নগরে রোড ক্র্যাশে নিহতদের ৯২ শতাংশই ছিলেন ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক-ব্যবহারকারী, যেমন পথচারী, মোটরসাইকেল, থ্রি-হুইলার আরোহী ইত্যাদি।
ডিসেম্বর ২০২২ থেকে নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত বৈশ্বিক মানদণ্ড বিবেচনায় (আর্টেরিয়াল সড়কে ৫০ কিমি/ঘণ্টা ও লোকাল ও কালেকটর রোডে ৩০ কিমি/ঘণ্টা) গাড়ির গতি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, নগরের সড়কগুলোতে ৩৪ শতাংশ গাড়িই নির্ধারিত গতিসীমা লঙ্ঘন করেছে। অন্যদিকে লোকাল ও কালেকটর রোডে, ৪৫ শতাংশ গাড়ি নির্ধারিত গতিসীমা অমান্য করেছে। অবশ্য বিআরটিএ’র গতিসীমা নির্দেশিকা অনুসারে দেখা গেছে, সব ধরনের গাড়ি ও রাস্তা বিবেচনায় ৪৪ শতাংশ গাড়ি নির্ধারিত গতিসীমার চেয়ে বেশি গতিতে চলে।
তিনি বলেন, ৭০ শতাংশ মোটরসাইকেল নির্ধারিত গতিসীমা লঙ্ঘন করেছে। এছাড়া সপ্তাহের কর্ম দিবসের তুলনায় ছুটির দিনে গতিসীমা লঙ্ঘনের হার বেশি পাওয়া গেছে; কর্মদিবসে ৪২ শতাংশ ও ছুটির দিনে ৪৭ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিআরটিএর উপ-পরিচালক (প্রকৌশল) কেএম মাহাবুব কবির ও সিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক উত্তর) রুহুল আমিন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, জনস হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট (জেএইচ-আইআইআরইউ), সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন রিসার্চ বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) এবং ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস যৌথভাবে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে।
ডিজে