কমিশনের জালে বন্দি চট্টগ্রাম বন্দরের শ্রমিকরা, সাইফ পাওয়ারটেকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
শ্রমিকের নামে কাজ, মালিকের নামে গেট পাস
চট্টগ্রাম বন্দরের ডক এলাকার শ্রমিকরা বেতন বৈষম্য, গেট পাস জটিলতা, কমিশন কাটার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। বৈষম্যমুক্ত কর্মপরিবেশ তৈরি করতে তারা ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন।
শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, কাজে অংশগ্রহণ ও গেট পাসের বিনিময়ে কমিশন কেটে নেন মালিকপক্ষ। এছাড়া ‘সাইফ পাওয়ার টেক’ নামের প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী গেট পাসও দেয় না।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টম মোড়ে এসব বৈষম্য দূর কতে ‘ডক বন্দর শ্রমিক কর্মচারী অধিকার আন্দোলন’র ব্যানারে তারা মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে একাধিক শ্রমিক জানান, প্রথম দাবি—বেতন বৈষম্য দূর করতে হবে। একই কন্টেইনারে কাজ করেও বিভিন্ন কোম্পানিতে রেইট আলাদা। কোথাও ৩৩৩ টাকা, কোথাও ২৮০ টাকা দেওয়া হয়। আবার এক্সপ্রেস কন্টেইনারে যেখানে ৩৬০ টাকা পাওয়ার কথা, সেখানে ১০০ টাকা কম দেওয়া হয়। এটা কোন ধরনের ন্যায্যতা?
শ্রমিকদের ভাষ্যমতে, তারা দীর্ঘদিন ধরে বন্দরে কাজ করলেও এখনো স্থায়ী গেট পাস পাননি অনেকে। ফলে পরিচয় সংকট ও চাকরির অনিশ্চয়তা থেকে যাচ্ছে।
তারা অভিযোগ করে বলেন, মালিকপক্ষের লোকজন গেট পাস ও কাজে অংশগ্রহণের বিনিময়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে কমিশন আদায় করছে।
বহির্নোঙ্গরে অবস্থানরত শ্রমিকদেরকেও শ্রম শাখায় অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়ে তারা বলেন, বন্দরের কর্মকর্তা নিয়োগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উৎসব বোনাস পান, অথচ শ্রমিকদের বেলায় ৬ মাসের ‘চাকরি স্থায়িত্ব’ শর্ত দেখিয়ে বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয়। এই দ্বিচারিতা আর বৈষম্য চলতে পারে না।
শ্রমিকদের অভিযোগ, ‘সাইফ পাওয়ার টেক’ নামে প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী গেট পাস দেয় না। এমনকি কাজের রেট কমিয়ে দেওয়া ও শ্রমিক স্বার্থ উপেক্ষা করে তারা।
এছাড়াও শ্রমিকরা দাবি করেন, বন্দরে কর্তৃপক্ষের জন্য আলাদা হাসপাতাল থাকলেও শ্রমিকদের জন্য নেই কোনো স্বাস্থ্যসেবা। চিকিৎসার অভাবে শ্রমিক জসিমের মৃত্যুর ঘটনাকে তারা ‘বন্দর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা’ বলে উল্লেখ করেন।
মোবারক নামে এক শ্রমিক বলেন, এই কমিশনের বেড়াজাল থেকে মুক্তি চাই। শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি চাই।
২০০৮ সালের একটি চুক্তির প্রসঙ্গ এনে শ্রমিক নেতারা বলেন, সেই চুক্তি অনুযায়ী কন্টেইনার আয়ের ৭৫% শ্রমিক পাবে, ২৫% মালিকপক্ষ। কিন্তু এখন সেই অনুপাতও মানা হচ্ছে না।
তাদের দাবি, ডেইলি স্লিপে লেখা থাকে ৩৮৫ টাকা, অথচ প্রকৃত বেতনের বড় একটা অংশ গায়েব হয়ে যায়। গেট পাসেও মালিকের নাম থেকে যাচ্ছে, যা শ্রমিকদের স্বাধীন পরিচয় প্রতিষ্ঠার পথে বাধা।
৬ দফা দাবি
সকল শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বিদ্যমান বেতন বৈষম্য নিরসন, দীর্ঘদিন কাজ করা শ্রমিকদের স্থায়ী গেইট পাস প্রদান, বহির্নোঙরের শ্রমিকদের শ্রম শাখায় অন্তর্ভুক্তি ও পরিচয়পত্র, শ্রমিকদের উৎসব বোনাসে সমান অধিকার, ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানিতে কর্মরত শ্রমিকদের দ্রুত শ্রম শাখায় অন্তর্ভুক্তি ও তালিকা প্রকাশ, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তা বন্দর থেকে বিতাড়ন এবং শ্রমিকবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা।
শ্রমিক নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এই ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নে দেরী হলে পরবর্তী কর্মসূচিতে যেতে আমরা বাধ্য হবো।
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ডক বন্দর শ্রমিক-কর্মচারী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফারভেজ, সদস্য সচিব মো. শামিম। এছাড়াও শ্রমিকদের পক্ষে আবুল কালাম মিয়া, মো. আবুল আলম, মোহাম্মদ আরিফুল ইসলামসহ বন্দর কর্মকর্তা-কর্মচারিবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।
জেজে/ডিজে