কর্মচারীকে মালিক বানিয়ে নামসর্বস্ব কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) থেকে ২১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তার স্ত্রী রুখমিলা জামান ও ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. রুবেল হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, স্ত্রী ও ইউসিবি’র সাবেক চেয়ারম্যান রুখমিলা জামান, ব্যাংকের সাবেক এমডি আরিফ কাদরী, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বজল আহমেদ বাবুল, সাবেক পরিচালক ইউনুছ আহমদ, আনিসুজ্জামান চৌধুরী, আখতার মতিন চৌধুরী, এম এ সবুর, হাজী আবু কালাম, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, আসিফুজ্জামান চৌধুরী, রোকসানা জামান চৌধুরী, বশির আহমেদ, আফরোজা জামান, সৈয়দ কামরুজ্জামানসহ ব্যাংক কর্মকর্তারা। এছাড়া, আরামিট ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মকর্তাও মামলায় অন্তর্ভুক্ত।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে আরামিটের এক জুনিয়র কর্মকর্তা মিছবাহুল আলম নিজের নামে ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স নেন। পরে সেটিকে ব্যবসায়িক সত্তা দেখিয়ে ইউসিবির কারওয়ান বাজার শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। তখনকার কর্মকর্তারা যাচাই না করে অ্যাকাউন্ট চালু করেন।
পরে ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ৩০ কোটি টাকার ঋণের আবেদন হয়, যার মধ্যে অনুমোদন মেলে ২১ কোটি টাকার। শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মিথ্যা পরিদর্শন প্রতিবেদন বানিয়ে গ্রাহককে অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী হিসেবে দেখান। প্রতিবেদনে ভুয়া গুদামঘর, হাজার হাজার টন স্টক ও শত কোটি টাকার পণ্যের তথ্য দেওয়া হয়।
ঋণের টাকা জমার পর তা নগদে উত্তোলন ও বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করে পাচার করা হয়। আরেকটি ২৫ কোটি টাকার ঋণ ঘুরিয়ে এনে মডেল ট্রেডিংয়ের দায় সমন্বয় দেখানো হয়—অর্থাৎ এক জালিয়াতি ঢাকতে আরেক জালিয়াতির টাকা ব্যবহার।
তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে প্রতারণা, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঋণ অনুমোদন ও আত্মসাৎ করেছে এবং টাকা বিদেশে পাচার করেছে।
তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির একাধিক ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা হয়েছে।
এর আগেও ১০৩ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় সাইফুজ্জামান, তার স্ত্রী ও ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আসামি করে পাঁচটি মামলা করেছিল দুদক।
কাতারভিত্তিক আল-জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দ্য মিনিস্টার্স মিলিয়নস-এ জানানো হয়, বিদেশে সাইফুজ্জামানের প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের সম্পদ আছে। শুধু যুক্তরাজ্যেই রয়েছে ৩৬০টি বাড়ি।
বাংলাদেশের আদালত ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য, ইউএই ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে তার শত শত স্থাবর সম্পদ ক্রোক করেছে। পাশাপাশি ৩৯টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ, ১০২ কোটি টাকার শেয়ার ও ৯৫৭ বিঘা জমি জব্দ করা হয়েছে। তার বিদেশযাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।