জাবেদের গোপন সাম্রাজ্যের চাবি উৎপল-আজিজের হাতেই, ল্যাপটপ-মোবাইলে বিস্ফোরক তথ্য

সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিদেশে অর্জিত সম্পদ এবং অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া তার দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী উৎপল পাল ও আব্দুল আজিজকে ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। তারা দুইজন জাবেদের আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তা।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল এ আদেশ দেন। এর আগে বুধবার দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি টিম অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ডবলমুরিং থানায় হেফাজতে রাখে। বৃহস্পতিবার ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠালে রিমান্ডের শুনানি হয়।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসাইন জানান, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছিল। শুনানি শেষে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

বিদেশে সম্পদ দেখাশোনায় উৎপল

দুদক সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার উৎপল পাল আরামিট গ্রুপের এজিএম হলেও দীর্ঘদিন ধরে জাবেদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে বিদেশে সম্পদ তৈরি ও দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন। তার কাছ থেকে জব্দ হওয়া দুটি ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইল ফোন থেকে বিপুল পরিমাণ তথ্য পাওয়া গেছে। এসব ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। দুদকের দাবি, দেশ থেকে দুবাই হয়ে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার প্রক্রিয়ার মূলহোতা বা মাস্টারমাইন্ড ছিলেন উৎপল পাল।

সম্পদ কেনাবেচা করতেন আজিজ

অপরদিকে গ্রেপ্তার আব্দুল আজিজ আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেডের এজিএম। তিনি মূলত সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তি কেনা-বেচা, ভাড়া এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন। মামলার এজাহারে আসামির তালিকায় তার নাম রয়েছে।

দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, ‘আসামিদের মধ্যে আব্দুল আজিজ এজাহারভুক্ত আসামি। উৎপল পাল তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার। দুজনকেই আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’

মামলার যা ছিল

গত ২৪ জুলাই দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মশিউর রহমান বাদী হয়ে সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদসহ ৩১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় জাবেদের স্ত্রী ও ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমিলা জামান, ব্যাংকের পরিচালক আসিফুজ্জামান চৌধুরী, জাবেদের বোন রোকসানা জামান চৌধুরী এবং সাবেক পরিচালক বশির আহমেদকেও আসামি করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, জাবেদের মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তাদের নামে ভিশন ট্রেডিং, আলফা ট্রেডার্স, ক্ল্যাসিক ট্রেডিং, মডেল ট্রেডিং ও ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং—এই পাঁচটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান খোলা হয়। পরে ইউসিবিএল ব্যাংকের চট্টগ্রাম বন্দর শাখায় এসব প্রতিষ্ঠানের নামে হিসাব খুলে গম, ছোলা, হলুদ ও মটর আমদানির নামে ২৫ কোটি টাকার ‘টাইম লোন’ অনুমোদন করানো হয়।

ব্যাংকের ক্রেডিট কমিটির ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ থাকা সত্ত্বেও ২০২০ সালের ৮ মার্চ পরিচালনা পর্ষদ ঋণ অনুমোদন করে। এরপর সেই টাকা বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করে নগদে উত্তোলন করা হয় এবং আরামিট গ্রুপের হিসাবে জমা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ব্যাংক পরিচালক, ঋণ আবেদনকারী ও অনুমোদনকারী সবাই আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সমন্বিত চক্রান্তের মাধ্যমেই এ অর্থপাচার সম্ভব হয়েছে।

জেজে/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm