চট্টগ্রামে দুই ভাই গ্রেপ্তার যৌথবাহিনীর হাতে, রাতারাতি ৪ মামলা!

অভিযোগ সত্যি, নাকি সাজানো?

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে একই পরিবারের দুই সহোদরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকলেও আটকের পরদিন একজনকে চারটি মামলায় এবং অপরজনকে দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এই মামলাগুলোও এন্ট্রি হয় ওইদিনই।

গ্রেপ্তার দুই ভাই হলেন—মো. নজিবুল হক শাওন (৩৭) ও নেছারুল হক সজীব (৩০)। এর মধ্যে শাওন জিয়া মঞ্চ কর্ণফুলী উপজেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব।

রোববার (২৩ মার্চ) রাত ১০টার দিকে কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের মইজ্জ্যারটেক এলাকায় নজির মেম্বার বাড়িতে সেনা পুলিশসহ যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করে। এর পরপরই পুলিশ গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছিল, দুর্ধর্ষ এক সন্ত্রাসী ও অস্ত্রবাজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অভিযানের পর টানা তিন ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়ে ৫ পিস ইয়াবা, ৯ গ্রাম গাঁজা এবং দেশীয় অস্ত্রসহ ২১টি রামদা, চাপাতি, ছোরা, একটি আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স ও স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৫১ ফোন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কর্ণফুলী থানার এসআই পরিতোষ দাশ বাদি হয়ে অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। একই রাতে তাদের বিরুদ্ধে আরও দুটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়।

অভিযানের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, তাদের কাছ থেকে ৩০ ইঞ্চি লম্বা রামদাসহ কিছু চাপাতি, ছোরা এবং অন্যান্য দেশীয় অস্ত্রসহ মোট ২১টি অস্ত্র উদ্ধার করে জব্দ করেন। তল্লাশির সময় যৌথ বাহিনী জানায়, মইজ্জ্যারটেক এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানের সময় শাওন ও সজীবকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়।

এক রাতেই চার মামলা

কর্ণফুলী থানার এসআই পরিতোষ দাশ বাদি হয়ে অস্ত্র আইন, ১৮৭৮-এর ১৯-ক ধারায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর-৩৩)। এরপর ইয়াবা ও গাঁজা নিজ হেফাজতে রাখার অপরাধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

এছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. আবদুন নুর বাদি হয়ে শাওনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও শারীরিক লাঞ্ছনার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর-২৯)। একইসঙ্গে প্রকৌশলী সৈয়দ গোলামুর রহমান নামে এক ব্যক্তি বাদি হয়ে সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পে চাঁদা দাবির অভিযোগে আরও একটি মামলা দায়ের করেন।

মোট চারটি মামলায় হয় ২৪ মার্চ রাতে। চারটিতেই শাওনকে আসামি হিসেবে দেখানো হয়। তবে সজীবকে আসামি দেখানো হয় অস্ত্র ও মাদকের মামলা দুটিতে।

মামলার বাদি আবদুন নুর জানান, তিনি এক জমি কেনাবেচার মধ্যস্থতা করেন। এ নিয়ে শাওন ও তার সহযোগীরা তার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে হুমকি দেওয়া হয়। ১৭ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় মইজ্জ্যারটেক রফিক সওদাগরের মুদি দোকানের সামনে শাওন ও তার সহযোগীরা আবদুন নুরের কাছে চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিতে না চাইলে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় ও তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ভুক্তভোগীর চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়।

এই মামলায় শাওনকে প্রধান আসামি করা হয়।

দ্বিতীয় মামলার বাদি প্রকৌশলী সৈয়দ গোলামুর রহমানের অভিযোগ, তার প্রতিষ্ঠান হাসমত অ্যান্ড ব্রাদার্স সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি প্রকল্পের কাজ করছে। এই কাজে বাধা দেওয়ার জন্য শাওন ও তার সহযোগীরা ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

২২ মার্চ বিকাল সাড়ে ৫টায় কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেক টোলপ্লাজার পাশে অভিযুক্তরা চাঁদার জন্য প্রকৌশলীর কর্মস্থলে যান। তারা প্রকৌশলীর ড্রাইভারকে মারধর করেন এবং প্রকৌশলীকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে সাইট থেকে ১,০০০ ফুট বালি ও ৫০০ ফুট পাথর লুট করে নিয়ে যান। হুমকি দেন, চাঁদা না দিলে সড়কের কাজ করতে দেওয়া হবে না। এই মামলায়ও শাওনকে প্রধান আসামি করা হয়।

পরিবারের দাবি, মামলাগুলো পরিকল্পিত

শাওনের পরিবারের দাবি, দুই ভাইয়ের কাছে পাওয়া ৫ পিস ইয়াবা ও ৯ গ্রাম গাঁজার অভিযোগ সম্পূর্ণ সাজানো। তাদের মতে, জমি বিরোধের জেরে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রভাবশালীরা শাওন ও সজীবকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শাওন দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। গত ৫ আগস্ট এলাকায় ফেরার পর থেকে তার বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে। তবে তাদের বিরুদ্ধে আগেও আলমগীর হত্যা মামলার অভিযোগ ছিল। তারা ওই হত্যা মামলারও আসামি ছিলেন। যৌথ বাহিনীর অভিযানের পরপরই এক রাতের মধ্যে ৪টি মামলা দায়ের করা হয়।

শিকলবাহা সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন মো. হারুন অর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শরীফ জানান, চাঁদাবাজির একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্র ও মাদকসহ দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আদালতে পাঠানো হলে তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

জেজে/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm